একজন সফল উদ্যোক্তা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন এক যুগ। এরপরে নিজের ভালোলাগা থেকেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনলেন। শিল্পীসত্তাকে কাজে লাগিয়ে রন্ধন শিল্পকেই বেছে নিলেন ফাতেমা আবেদীন নাজলা। তার এই পথ সহজ করে দিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। প্রথমে পরিচিতদের তার ইচ্ছার কথা জানালেন। পেয়েছেন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের উৎসাহ ও আগ্রহ। শুরু করেন অনলাইনে খাবারের ব্যবসা। হয়ে ওঠেন একজন সফল উদ্যোক্তা। প্রথমে একজন সহযোগী নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন তার অধীনে কর্মরত আছেন বারো জন। যাদের পারিশ্রমিক দশ হাজারের বেশি।স্বল্প বিনিয়োগে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা কঠিন হলেও চেষ্টা থাকলে সবকিছুই সম্ভব তা প্রমাণ করেছেন নাজলা। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘এন’স কিচেন’ এর পথচলা। প্রথমে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও এখন ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে নাজলার রান্না। রাজধানীর বাইরেও এন’স কিচেনের শাখা বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় আড়াই শ’ মানুষের খাবার প্রস্তুত করেন তিনি। যেকোনো উৎসব-পার্বণে এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। কোন পেশা ভালো লাগছে রন্ধনশিল্পীর কাজ নাকি সাংবাদিকতা? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন- ‘অবশ্যই আমি বর্তমান পেশাকেই উপভোগ করছি।সংসারে বেশি সময় দিতে পারছি। এছাড়াও স্বাধীনভাবে কাজ করছি এটাইতো অনেক।’ উচ্চ ডিগ্রিধারী হলেই যে চাকরি করতে হবে এই ধারণা ভেঙে দিলেন নাজলা। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেও চাকরি ছেড়ে হয়ে গলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। অনলাইন পোর্টালের সেন্ট্রাল ডেস্কের প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর রন্ধনশিল্পী নাজলাকে এখন সামলাতে হয় খাবার রান্না, প্যাকেট করা, রাইডার কল করা, রাইডার খাবার নিয়ে জ্যাম ঠেলে ঠিক সময়ে পৌঁছাল কি না এমন আরও অনেককিছু। পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। তবুও এখানেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের যথার্থতা। নাজলা প্রতিদিনের খাবারেই বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন।আবহাওয়াসহ বিভিন্ন অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করেন প্রতিদিনের খাবারের মেন্যু। তাতে থাকে বিভিন্ন নিরীক্ষামূলক খাবার, থাকে দেশীয় ও আঞ্চলিক খাবার। এ ছাড়া ক্রেতারা আগে থেকেই নিজেদের পছন্দের খাবারের কথাও বলে রাখেন। করপোরেট অফিস থেকে শুরু করে কর্মজীবী নারীর ঘরেও পৌঁছে দিচ্ছে তার প্রস্তুতকৃত খাবার। নিরলস প্রচেষ্টার কারণে ঢাকার ভোজনপ্রেমীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় এন’স কিচেনের রান্না। ভালো রন্ধনশিল্পী হিসেবে অনেক পুরস্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে। অনলাইনে খাবারের ব্যবসাকে প্রসারিত করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছেন ফাতেমা আবেদীন নাজলা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে অনলাইন বেচাকেনায় প্রস্তুত খাবারের সরবরাহ করা, বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনী সামগ্রী থেকে শুরু করে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোও যুক্ত হয়েছে। গান শেখা, গিটার শেখা, আবৃত্তি, নৃত্য, আর্ট, স্বাস্থ্যসেবাসহ যাবতীয় বিষয় এখন অনলাইনে শেখানো হয়। এগুলোও উপার্জনের মাধ্যম। অনলাইন ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিই সবচেয়ে বেশি। ঘরের বাইরে ৭/৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কাজ করতে হয় না বলে অনলাইনে নারীর পদচারণা বাড়ছে। বাইরে বের হলে নারীদের এখনো নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। আর অনলাইন ব্যবসায় নারীর পদচারণা হয় স্বাচ্ছন্দ্যের।বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুকভিত্তিক অনেক পেইজ তৈরি হয়েছে, যেখানে নানা ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এসব উদ্যোক্তার বেশিরভাগই নারী। এছাড়া যাদের সন্তান লালন-পালন করে চাকরিতে সময় দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তাড়াও এখন অনলাইনে কাজ করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নারীরা হয়ে উঠছেন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য মতে, এখন দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। এর মধ্যে ১২ হাজার পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। গত এক বছরে এ খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫‘শ কোটি টাকা।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।