ফুটপাতের দোকান থেকে ‘রেকার বিল’ আদায়ের অভিযোগ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতে বসা ভাসমান দোকানদারদের কাছ থেকে ‘রেকার বিল’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রেকার বিলের রসিদ দিয়ে দোকান প্রতি ১২০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফুটপাতের পাশে পুলিশের একটি রেকার গাড়ি দাঁড় করিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্জেন্ট অথবা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ভাসমান দোকানে যান।
তিনি রেকার গাড়ি দেখিয়ে বলেন, রেকার বিল দিতে। তবে জরিমানার টাকা মোবাইল ব্যাংকিং অথবা সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের ডিসি (উপকমিশনার) অফিসে জমা দিতে হয় না। নগদ টাকায় বিল পরিশোধ করতে হয়।
এ ধরনের রেকার বিলের রসিদ ধরিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পান্থপথ, ফার্মগেট, গ্রিন রোড, এ্যালিফেন্ট রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাতের ভাসমান দোকান থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পান্থপথ সড়কের ফুটপাতের (পশ্চিম পাশ) পাশে গত ১৭ জুন রেকার দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভাসমান দোকান থেকে ‘বিল’ নিতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ জুলাই বসুন্ধরা শপিং মলের বিপরীতে ফার্নিচার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালায়। ফার্নিচার মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে পান্থপথের মোড় পর্যন্ত শতাধিক ভাসমান চায়ের দোকান, পিঠা বিক্রির দোকান, ফলের দোকান, জুতা-স্যান্ডেলের দোকান, ফুসকা-চটপটির দোকান এমনকি ঝালমুড়ির দোকান রয়েছে। কেউ ভ্যানগাড়ির ওপর, কেউবা কাঠের চৌকি আবার কেউবা ত্রিপল বিছিয়ে দোকানের পসরা সাজিয়েছেন।
ফুটপাতের ভাসমান দোকানিদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ঘুরে ঘুরে কারো কাছ থেকে ১২০০ টাকা, কারও কাছ থেকে ৬০০ আবার কারও কাছ থেকে ৫০০ টাকা রেকার বিলের নামে আদায় করেন। এভাবে টাকা আদায়ের সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দোকানদের বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে দোকান প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। না হলে সব দোকান রেকার গাড়ি দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
ফুটপাতের ভাসমান দোকানদারের মধ্যে ১২ জনের কাছে রেকার বিলের রসিদ পাওয়া গেছে। একটি রসিদে তারিখ উল্লেখ রয়েছে ২০-৭-২০২৩। আরও উল্লেখ রয়েছে রেকার স্লিপ নম্বর ১৩১২৭৩, ব্যবহৃত রেকার নম্বর-৪, রেকারকৃত গাড়ির ধরণ-ভ্যান, রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘরে লেখা রয়েছে দোকান, মালিকের নাম-হাসান। ১২০০ টাকা আদায় করা হল। আদেশক্রমে উপকমিশনার, ট্রাফিক রমনা বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
আরেকটি স্লিপে তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১৭-৬-২০২৩, রেকার স্লিপ নম্বর-১২৭১৮০, ব্যবহৃত রেকার নম্বর ২, রেজিস্ট্রেশন-নম্বরবিহীন, মালিকের নাম আব্দুর রাজ্জাক, রেকার বিল-১২০০ টাকা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, সাধারণত সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করলে, ফুটপাতে যানবাহন পার্কিং করে মানুষ চলাচলের বাধাগ্রস্থ করলে অথবা কোন যানবাহন সড়কে নষ্ট হয়ে গেলে ট্রাফিক পুলিশ রেকার গাড়ি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে। এক্ষেত্রে রেকারিং বিল ১২০০ টাকা দিতে হয়। রেকার বিল সরকারি কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু ফুটপাতে ভাসমান দোকানের ক্ষেত্রে রশিদ ধরিয়ে দিয়ে রেকার বিল আদায় করার কোনো অভিযোগ নেই। এমন কোনো ঘটনা ঘটার প্রশ্নই ওঠে না। তবে কেউ যদি কারো অগোচরে এমন কাজ করে থাকেন, সেটি অবশ্যই তদন্ত হবে এবং প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফুটপাতে ভাসমান দোকান থেকে রেকার বিল আদায় প্রসঙ্গে হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ রেকারের ভয় দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে। এটা এক ধরনের নিরব চাঁদাবাজির মতো।
ডিএমপি’র মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ফুটপাতের ভাসমান দোকান থেকে রেকার বিল আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের এই রশিদ ব্যবহার করে, সেটির দায়ভার তার। বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।