গ্রেফতারের পর ইনহেলারও দিতে দেয়নি পুলিশ


চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ চান্দগাঁও থানা হেফাজতে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ-হৃদরোগ আক্রান্ত ৬৭ বছর বয়সি শহিদুল্লাহকে ইনহেলারও দিতে দেয়নি পুলিশ। গ্রেফতারের পর নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাসা থেকে তাকে ধরে আনার পর থানায় রাতেই তিনি মারা গেছেন। এদিকে, যে মারধরের মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা বলা হচ্ছে সেই মামলা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আদালতে এক নারীর করা মামলা সম্পর্কে শহিদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানতেন না। শহিদুল্লাহর ছেলে ক্যাপ্টেন নাসিফ শরীফ বলেন, বাবা রাতের খাবার খেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসার কাছে একটি রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। ওই সময় সাদা পোশাকের দুই ব্যক্তি নিজেদের চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিচয়ে বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান। খবর পেয়ে আমার চাচারা থানায় যান। কিন্তু থানায় তাদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। বাবা হার্টের রোগী ছিলেন। তার জন্য ইনহেলার নিয়ে যান চাচারা। পুলিশ সদস্যকে বিষয়টি জানানো হলেও ইনহেলার বাবার কাছে পাঠাতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, বাবাকে থানায় হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তাকে নির্যাতন করা হয়। ইনহেলার না দেওয়ার কারণে বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এ মৃত্যুর জন্য পুলিশ দায়ী।’ দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপ-পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে শহিদুল্লাহ ২০১৮ সালে অবসরে যান। নগরীর এক কিলোমিটার এলাকার মোজাহের উল্লাহ মুহুরী বাড়িসংলগ্ন এলাকা থেকে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শহিদুল্লাহকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে আনে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার এএসআই ইউসুফ আলী ও এএসআই সোহেল সাদা পোশাকে সেখানে যান। পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওয়ারেন্ট আছে বলে তারা শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার করেন। দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক পরিচয় দিয়ে শহিদুল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে জানালে আমি নিজেই থানায় যেতাম। এভাবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। তাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে তারা দুই পাশ থেকে দুই হাত ধরে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেন। থানায় নিয়ে যাওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সিএনজি অটোরিকশা করে তাকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ শহিদুল্লাহ আমার পরিচিত ছিলেন। বাড়ি করার সময় চাঁদা দাবির ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেছিলেন। সেই মামলার আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার বিষয়টি আমি জানতাম না। ওয়ারেন্ট তামিল করার পর জানতে পারি। সাধারণত ওয়ারেন্টের আসামিদের গ্রেফতার করার পর হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। কিন্তু তাকে গ্রেফতারের পর হ্যান্ডকাফ পুলিশ পরায়নি। থানায় এনে প্রথমে তাকে সেকেন্ড অফিসারের কক্ষে রাখা হয়। পরে আমার কক্ষে আনা হয়। সেখানে পরিবারের লোকজন দেখা করে ইনহেলার দিয়েছিলেন। যদিও ওই সময় আমি থানায় ছিলাম না। পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু প্রসঙ্গে ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, শহিদুল্লাহর শরীর খারাপ হওয়ায় প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়। আসতে দেরি হওয়ায় সিএনজি দিয়ে প্রথমে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসিল্যান্ড বাকলিয়া লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। জানতে চাইলে বাকলিয়া সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএফএম শামীম বলেন, শহিদুল্লাহর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছি। তবে কিছু বলতে পারছি না। শহিদুল্লাহ ও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে মারামারি ও হুমকির মামলা : মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু এসএম আসাদুজ্জামানের সঙ্গে শহিদুল্লাহর বিরোধ ছিল। শহিদুল্লাহকে কাবু করতে রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীকে দিয়ে আসাদুজ্জামান আদালতে মিথ্যা মামলা করান। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুই ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। ৮ মাস আগে কারাগার থেকে তিনি বের হন। শহিদুল্লাহর শ্যালক মো. কায়সার বলেন, অজ্ঞাত এক নারী শহিদুল্লাহ ও তার বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি ও মারধরের মিথ্যা মামলা করেন। আদালত থেকে সমন দেওয়া হলেও সেটি আমরা পাইনি। বিষয়টি জানার পর বুধবার সকালে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত থেকে আমি জামিন নিয়েছি।