পরামর্শকেই যাবে ২৮ শতাংশ


পরামর্শকেই যাবে ২৮ শতাংশ
অনুদানের প্রকল্পে যেন পরামর্শকের ফাঁদ। নেদারল্যান্ডসের দেওয়া অনুদানে ‘ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিজিং ফেজ’ (বিজিপি-বি) নামের কর্মসূচিতে অতিরিক্ত পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্ব নেওয়ার আগে এটি মাঝখানে প্রস্তুতি প্রকল্প হিসাবে নেওয়া হচ্ছে। এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু পরামর্শক খাতে চাওয়া হয়েছে ৪১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ।এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান। নয়ছয়ের আশঙ্কায় সেখানে পরামর্শক খাতের ব্যয় এবং তাদের বেতনের বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ বুধবার বলেন, এটি দুই প্রকল্পের মাঝখানে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি পর্ব বলা যায়। অর্থাৎ প্রকল্পটি হবে বাঁধ ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সংক্রান্ত। দ্বিতীয় পর্বে কী কী করা হবে, কীভাবে করা হবে। এসব নানা বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ পরিকল্পনা তৈরি করা করা হবে এ অংশের মাধ্যমে। এটা মূলত কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মতো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মেনে চলা হবে।আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কৃষি,পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, পরামর্শক সেবা খাতে ৮ জন সিনিয়র উপদেষ্টার বেতন বাবদ ১৫ কোটি টাকা, দুজন ইয়ং প্রফেশনাল বাবদ ২ কোটি টাকা এবং ৭ জন প্রফেশনাল বাবদ ৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আরও আছে ৭ জন কারিগরি স্টাফ বাবদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ৯ জন প্রশাসনিক স্টাফ বাবদ ২ কোটি টাকা এবং সাপোর্ট ও ফিল্ড স্টাফ বাবদ ৪ কোটি টাকাসহ মোট ৪১ কোটি কোটি টাকা পরামর্শক সেবা বাবদ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা অনেক বেশি। এছাড়া কিসের ভিত্তিতে এসব বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট নয়। পরামর্শকসহ অন্যান্য সহযোগী স্টাফদের বেতন ভাতার ব্যয় বিভাজন পিডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অন্তর্ভুক্ত করাসহ পরামর্শক খাতের ব্যয় ২০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে।সূত্র জানায়, সভায় পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. এনামুল হক বলেন, পিডিপিপিতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে লেখা হয়নি, যা সুনির্দিষ্ট ও স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যথেষ্ট সক্ষমতা বেড়েছে। সেই জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শকের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে দেশীয় পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। এছাড়া বৈদেশিক পরামর্শকদের বেতন ও ভাতা মাসিক সবোর্চ্চ ২৫ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বৈদেশিক ও দেশীয় পরামর্শকদের জনমাস ও বেতন ভাতা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, দেশীয় পরামর্শকদের সম্মানির তুলনায় বিদেশি পরামর্শকদের সম্মানি তিন, চারগুণ বেশি হতে পারে। কিন্তু এ চেয়ে বেশি হওয়া ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত পিডিপিপিতে কৃষি উন্নয়ন খাতে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে অন্যান্য খাত থেকে ব্যয় কমিয়ে কৃষি উন্নয়ন খাতের ব্যয় বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ১০ কোটি টাকা করা যায়।সূত্র আরও জানায়, সভায় সেচ অনুবিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. এনামূল হক আরও বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প সহায়তা হিসাবে নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান পাওয়া যাবে।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) প্রকৌশলী আবুল বাশার সভায় বলেন, নেদারল্যান্ডস সরকার, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রকৃত প্রকৌশল এবং নির্মাণ কৌশল থেকে বের হয়ে সমন্বিত পানিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাপাউবোর অধীনে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের পানি সম্পদ উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১১ সালে সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের ধারণা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি উপকারভোগীরা প্রশংসা করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ সভায় বলেন, ব্লু গোল্ড প্রোগ্রামে খুলনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলার মোট ২২টি উপকূলীয় পোল্ডারকে (বাঁধ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম (বাপাউবো অংশ) ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের ফলে পোল্ডারবাসীদের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। প্রস্তাবিত ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিজিং ফেজ প্রণয়নের জন্য একটি মিশন দেওয়া হয়। মিশনটি গত বছরের ৮ থেকে ১৯ মে বাপাউবোর সদর দপ্তর এবং ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রামে পানি ব্যবস্থাপনা দলগুলোর সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করে। ওই সভাগুলোতে উপকূলীয় অঞ্চলে ইন-পোল্ডার পানি ব্যবস্থাপনা চালু করা এবং অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর পদ্ধতি তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর পার্টিসিপেটরি ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, চ্যালেঞ্জ অ্যান্ডওয়ে ফরওয়ার্ড কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাবিত ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম ব্রিজিং ফেইজটি মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পানি ব্যবস্থাপনা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও বাপাউবোর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত কর্মশালার জন্য তৈরি করা মিশন রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। সভায় আলোচনা হয় আগে ২২টি পোল্ডারে কী কী কাজকর্ম করা হয়েছে এবং প্রকল্পের আওতায় পোল্ডারগুলোয় কী কী কাজকর্ম করা হবে তার বিবরণ ডিপিপিতে থাকা প্রয়োজন ছিল। এছাড়া খাল খননের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা, মাটির পরিমাণ এবং বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ঢাল পিডিপিপিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন।