চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে
অনলাইন নিউজ ডেক্স
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনারে লুকিয়ে জাহাজে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা থামছে না। এতে নষ্ট হচ্ছে বন্দরের ভাবমূর্তি।
বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৩ বছরে কনটেইনারে প্রবেশ করে বিদেশ যাওয়ার অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ খালি কনটেইনারে ঢুকে জাহাজে সিঙ্গাপুর যাওয়ার চেষ্টাকালে লিটন মোল্যা নামে এক যুবক ধরা পড়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকে জাহাজের কর্মীরা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন।
বন্দরের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর তাকে বন্দর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার ওই যুবককে পুলিশ আদালতে হাজির করলে সংশ্লিষ্ট আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সুরক্ষিত এলাকা ভেদ করে এই যুবকের জাহাজে উঠে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের যে কোনো বন্দরে নিরাপত্তার বিষয়টিই থাকে মুখ্য। এর সঙ্গে দেশের একটা ভাবমূর্তিও জড়িত থাকে। কোনো বন্দরে জাহাজ পাঠাতে গেলে সংশ্লিষ্টরা আগে সেই বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে দেখেন। চট্টগ্রাম বন্দর একটি আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড) কমপ্লায়েন্ট বন্দর।
গত কয়েক বছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বন্দরের সংরক্ষিত ও আশপাশের ৯৮ শতাংশ এলাকা এরইমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় আনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও আনসার ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সেখানে কাজ করছেন। জেটিতে পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ের সময় জাহাজে ওয়াচম্যান রাখার তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে। এরপরও লিটন মোল্যা নামের ওই যুবক জেটিতে অবস্থানরত জাহাজ পর্যন্ত পৌঁছে যান।
পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, লিটন মোল্যা পেশায় ট্রাকচালক। তিনি বন্দরে প্রবেশের বৈধ পাশ নিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকেছিলেন। পণ্য পরিবহণের জন্য বন্দরে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান প্রবেশ করে ও বের হয়। ট্রাকচালকদের ডাটাবেজ রয়েছে। সেই ডাটাবেজের আওতায় তাদের পাশ ইস্যু করা হয়ে থাকে। লিটন ২৪ সেপ্টেম্বর পাশ নিয়ে বন্দরের সিসিটি-২ গেট দিয়ে ঢুকেছিলেন।
এরপর জেটিতে অবস্থানরত এমভি হাইয়ান ভিউ নামের সিঙ্গাপুরগামী জাহাজের পেছন দিয়ে রেলিং বেয়ে জাহাজে উঠে যান। জাহাজের ভেতরে একটি খালি কনটেইনারে লুকিয়ে থাকেন। জাহাজটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করার পর পথে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কনটেইনার থেকে বেরিয়ে এলে জাহাজের কর্মীদের হাতে ধরা পড়েন। তাকে নিয়ে জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে যায়।
সেখান থেকে বৃহস্পতিবার জাহাজটি ফের চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে আসে। এরপর জাহাজের কর্মীরা তাকে বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত লিটন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাহাজে উঠেছিলেন ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ এ বিষয়ে বলেন, বারবার এ ধরনের ঘটনা দেশের একটা ভাবমূর্তির ব্যাপার। জেটির ভেতরে সব জাহাজে ওয়াচম্যান রাখা বাধ্যতামূলক করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পোর্ট সেলের মাধ্যমে ওয়াচম্যান দেওয়া হয়। বন্দরের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার ওপর ওয়াচম্যান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এরপরও একজন লোক জাহাজে উঠে যাওয়ার ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা আমাদের মাথায় আসে না। এরকম ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাহাজের ওপরে-নিচে প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন। যারা কাজ করেন তাদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। একইসঙ্গে এক কাজের জন্য বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করে কেউ যেন অন্য কাজে জড়িত হতে না পারেন সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।