পাখি তাড়ানোর যন্ত্র অচল শাহজালালে


উড়োজাহাজে বার্ড হিট ঠেকাতে শাহজালালে বসানো ৫ গ্যাস ক্যানন যন্ত্রের সবকটিই অচল। দু-একটি চলছে জোড়াতালি দিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জোড়াতালি দেওয়া এসব গ্যাস ক্যানন যন্ত্র পাখি তাড়াতে কোনো কাজে আসছে না। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিমানবন্দরের উড্ডয়ন ও অবতরণ। দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, বিশ্বের সব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে বার্ড হিট ঠেকাতে অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হয়ে থাকে। শাহজালালেও ৫টি যন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে, এগুলো নিুমানের। অনুন্নত দেশ থেকে আমদানি করা এসব যন্ত্র শুরু থেকেই পাখি তাড়াতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এর আগে একইভাবে রেডিয়েশন যন্ত্র (লেজার লাইট) বসিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, একেকটি উড়োজাহাজের মূল্য ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকা। অথচ কয়েক কোটি টাকার খরচ করলেই ইউরোপীয় মানের ভালো কোম্পানির গ্যাস ক্যানন যন্ত্র বসালে পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। শাহজালাল কর্তৃপক্ষের ইনস্পেকশনে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। দ্রুত এসব সমাধানের তাগিদ দিয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে শাহজালালের ওই উচ্চপর্যায়ের কমিটি। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বন্যপ্রাণী ও পাখির উপদ্রব বাড়ে। বিদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌসুমি পাখি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেয়। তখন বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে বাধার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এমন ২৬টি বার্ড হিটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা বেড়েই চলেছে। বণ্যপ্রাণী ও বার্ড হিট ঠেকাতে শাহজালালে ৫টি গ্যাস ক্যানন (উচ্চশব্দের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী তাড়ানো) যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই কাজ করছে না। কন্ট্রোল টাওয়ারে এগুলো চালানোর কোনো রিমোট কন্ট্রোলও নেই। এছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে চলাচলকারী যানবাহনের গতি নির্ণয় করার জন্য কোনো স্পিড মিটারও নেই। করা হয় না মনিটরিং। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। গত মাসে বেবিচকে পাঠানো পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪বিতে বেশকিছু লাইট ও সাপ্লিমেন্টারি লাইট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কিছু ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলে না। ট্যাক্সি ওয়ে ‘এন’-এর ‘ভিওআর’ চেক সিগন্যাল লাইট নতুন লাগানো এবং সংশ্লিষ্ট এরিয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। বিমানবন্দরে কর্মরতদের ট্রেনিং রেকর্ড সঠিকভাবে রাখা দরকার। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত শাহজালালে ২৬টি বন্যপ্রাণী ও পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। দিনদিন তা বেড়েই চলেছে। এটি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী ও পাখি তাড়াতে ৫টি গ্যাস ক্যানন স্থাপন করা হলেও বেশির ভাগই কাজ করছে না। বিমানবন্দরে যানবাহন চলাচলের জন্য অ্যারোড্রাম ম্যানুয়াল অনুযায়ী ১৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে যানবাহন না চালানোর নির্দেশনা থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। বিমানবন্দরে কোনো স্পিড লিমিট সিগন্যাল নেই। কন্ট্রোল টাওয়ার এবং ফায়ার স্টেশনের মাঝে কোনো ক্র্যাশ বেল পরিলক্ষিত হয়নি। রিপোর্টে ফ্লাইট নিরাপত্তা বাড়ানো এবং উড়োজাহাজের মসৃণ ও নিরাপদ অপারেশনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাভিয়েশন সেক্টরের বড় আতঙ্ক পাখির আঘাত বা ‘বার্ড হিট’। উড়োজাহাজ যখন আকাশে ওড়ে, তখন বিপরীত দিক থেকে পাখি আঘাত করে। এমনকি পাখি এয়ারক্রাফটের ডানায় থাকা ইঞ্জিনের ভেতরেও কখনো কখনো ঢুকে পড়ে। এতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আবার ইঞ্জিনে আগুনও ধরে যেতে পারে। পাখি হিট করার কারণে এয়ারক্রাফট মেরামতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ, কখনো দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ, ইঞ্জিনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে জানাতে হয়। ওই কোম্পানির বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা এসে সবকিছু চেক করে যে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে মেরামত করতে হয়। এতে একদিকে এয়ারক্রাফট অচল হয়ে শিডিউল বিপর্যয় হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। এ ঘটনা শুধু বিমানে বা দেশীয় এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রেই হচ্ছে তা না, বিদেশি উড়োজাহাজেও ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরেই শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখি ও শিয়াল মারার মানসম্মত অস্ত্র নেই। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোয়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে শাহজালালের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিমানবন্দর এরিয়া ইনস্পেকশন করা একটা রেগুলার প্রসেস। কমিটি ইনস্পেকশন করে যেসব জায়গায় ঘাটতি দেখতে পায়, সেগুলো দ্রুত পূরণ করার তাগিদ দিয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। বেবিচক সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, রানওয়েতে লাইট না থাকলে তো বিমান চলাচলই করতে পারত না। এগুলো সব সময় মেনটেইন্যান্সের মধ্যে রাখতে হয়। বেবিচক জানিয়েছে, শাহজালালের পরিদর্শন রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থ নেওয়া হচ্ছে।