এমপি জিন্নাহর অর্থ-সম্পদ বেড়েছে, স্ত্রী-সন্তানরাও কোটিপতি


বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ পেশায় ব্যবসায়ী। জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ তিনজনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ আসনে নৌকা মার্কাসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আটজন। এবারের হলফনামা অনুসারে ঋণ হিসাব অপরিবর্তিত থাকলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর আড়াই কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ বেড়েছে। লাখপতি স্ত্রী কোটিপতি ও নির্ভরশীলরা শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। বর্তমানে জিন্নাহর অর্থ-সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ৬০ লাখ চার হাজার ৩৮৭ টাকা। স্ত্রীর দুই কোটি ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৩০ টাকা ও নির্ভরশীলের (সন্তান) ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৫ টাকা রয়েছে। বিকম পাশ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর দাখিল করা হলফনামায় কৃষি খাতে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন- দুই হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া এক হাজার ৮০০ টাকা, ব্যবসা থেকে তিন লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা, নগদ নিজের দেড় লাখ টাকা ও স্ত্রীর দেড় লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা। যানবাহন মোটরসাইকেল ৭৭ হাজার টাকা ও ল্যান্ড ক্রুজার কার ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯১ টাকা। স্বর্ণালংকার নিজ নামে ৭০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নিজ নামে ৭০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র নিজ নামে ৮০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫৫ হাজার টাকা। নিজ নামে পিস্তল দেড় লাখ টাকা ও রাইফেল এক লাখ টাকা। কৃষিজমি নিজ নামে ১.৪০ শতক দুই লাখ ৭০ হাজার ও স্ত্রীর নামে .০৭ শতক এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি নিজ নামে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার। টিনশেড কাঁচাপাকা বাড়ি নিজ নামে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর .০৭ শতক বাড়ি সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং নিজ নামে পুকুর দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। তখন তার ঋণ সিসি (হাইপো) ৩০ লাখ টাকা ও মোটরকারের ঋণ ছয় লাখ ১৬ হাজার ৭৪২ টাকা ছিল। ওই সময় তার অর্থ-সম্পদ ছিল এক কোটি ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৮ টাকা। আর স্ত্রীর নামে বার লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গত ২৯ নভেম্বর হলফনামা দাখিল করেন। এতে দুদকে দুটি মানি লন্ডারিং আইনে মামলা তদন্তনাধীন থাকার কথা উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামায় এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ উল্লেখ করেন, কৃষি খাতে বছরে নিজের আয় দুই লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ টাকা ও নির্ভরশীলদের নামে ২৪ হাজার ৭২০ টাকা। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া নিজ নামে চার লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা ও নির্ভরশীলদের ৬০ হাজার টাকা। নিজ ব্যবসা সাত লাখ টাকা ও নির্ভরশীলদের ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত নিজ এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৬ টাকা ও নির্ভরশীলদের নামে তিন লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ টাকা। নির্ভরশীলদের পেশা থেকে আয় ছয় লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৫ টাকা। নগদ টাকা নিজ নামে ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৬ টাকা, স্ত্রীর নামে এক কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৪ টাকা ও নির্ভরশীলের নামে ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা নিজ ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮ টাকা, স্ত্রীর নামে ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৬ টাকা ও নির্ভরশীলের নামে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৩ টাকা। স্ত্রীর সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানত ২৮ লাখ টাকা। যানবাহন নিজের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার এক কোটি এক লাখ টাকা ও স্ত্রীর একটি ট্রাক ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার নিজের ৩০ তোলা ৭৫ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৪০ তোলা দুই লাখ টাকা ও নির্ভরশীলের ৫০ তোলা (মূল্য অজানা)। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা ও নির্ভরশীলের নামে দুই লাখ টাকা। আসবাবপত্র নিজের নামে ৮০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা ও নির্ভরশীলের নামে দুই লাখ টাকা। ব্যবসায় স্থায়ী বিনিয়োগ নিজ ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৭২ টাকা। কৃষি জমি নিজ নামে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যের ১৬৯৩.২২ শতক ও স্ত্রীর নামে ২৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ১৫৬.০৮ শতক। অকৃষি জমি নিজ নামে ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। নিজনামে দুটি দালান এক কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা এবং নিজ নামে একটি ফ্লাট ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৫ টাকা। এছাড়া মধুমতি ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখায় ঋণ পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৯ টাকা ও অগ্রণী ব্যাংক বগুড়ার মহাস্থান শাখায় ৩০ লাখ ৯০ হাজার ৮৭১ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে অগ্রণী ব্যাংকে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৫ টাকা ঋণ রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর মোট অর্থ সম্পদ ছিল এক কোটি ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৮ টাকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন কোটি ৬০ লাখ চার হাজার ৩৮৭ টাকা। গত পাঁচ বছরে অর্থ সম্পদ বেড়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। স্ত্রীর আগে মোট অর্থ-সম্পদ ছিল ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। গত পাঁচ বছরে তার অর্থ-সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৩০ টাকায়। তার অর্থ-সম্পদ বেড়েছে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩০ টাকার। নির্ভরশীলের কোনো অর্থ-সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে ৫০ তোলা স্বর্ণসহ এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৫ টাকা হয়েছে।