পুরোপুরি আমদানি নির্ভর চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ


চট্টগ্রাম এখন পুরোপরি আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড থেকে চট্টগ্রামের কোথাও গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। সর্বত্র এলএনজি। ফলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এখন এলএনজি আমদানি নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, এক সময়ের বিখ্যাত গ্যাস ফিল্ড সাঙ্গুতে ১১ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এটির মজুত শেষ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের আরেক গ্যাস ফিল্ড সেমুতাং। এটিও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এক সময় এ গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হলেও এখন ১ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে। যে কোনো সময় এটিও বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। তাই নতুন কোনো গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার না হলে চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট কাটবে না। অথবা গ্যাসের জাতীয় গ্রিড থেকে সংযোগ না দিলে পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে আবাসিক ও শিল্পমালিকরা গ্যাস সংকটে ভুগছেন। কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৬ সালে অগভীর সমুদ্রে চট্টগ্রামের সলিমপুরের কাছে স্থলভাগ থেকে ৫০ কিমি. দূরত্বে বঙ্গোপসাগরে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। কেয়ার্ন এনার্জি পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৯৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ২০১০ সালে কেয়ার্ন এনার্জির কাছ থেকে সাগরবক্ষের গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু কিনে নেয় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান সান্তোস। তখন এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১৬০ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে এর মজুত ফুরাতে থাকে। উৎপাদন মাত্রা ২০০৯ সালে গড়ে দৈনিক ৪৯ মিলিয়ন ও ২০১১ সালে গড়ে দৈনিক ১৮ মিলিয়ন ঘনঘুটে নেমে যায়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে এটি থেকে উৎপাদন দৈনিক দুই থেকে তিন মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এলে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪৮৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ হওয়ার পর শিল্প মালিক ও আবাসিক গ্রাহকদের আশার আলো ছিল অপর গ্যাস ক্ষেত্র সেমুতাং। এটি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার কালাপানি মৌজার ২১ একর ভূমিতে ১৯৬৩ সালে আবিষ্কৃত হলেও দীর্ঘদিন উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়নি গ্যাস ফিল্ডটিতে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১ সালে উৎপাদন শুরু করে। শুরুতে ৫ নম্বর কূপ এবং ৩ বছর পর ২০১৪ সালে ৬ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক গড়ে ১৪-১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। পরে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫ নম্বর কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন ৬ নম্বর কূপ থেকে প্রতিদিন মাত্র .৮ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। যে কোনো সময় গ্যাস উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে এ গ্যাস ক্ষেত্রের। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের দুটি গ্যাস ক্ষেত্র সাঙ্গু ও সেমুতাং। গ্যাসের মজুত শেষ হওয়ায় সাঙ্গুতে গ্যাস উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেমুতাং এখনও চালু থাকলেও অনেকটা বন্ধ হওয়ার মতোই। দৈনিক মাত্র ১ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। যা সর্বনিম্ন লো প্রেসার হিসাবে বিবেচিত। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে কোনো ধরনের গ্যাস পাওয়া যায় না। এক কথায় বলতে গেলে চট্টগ্রাম পুরোপুরি আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।