অধ্যক্ষ মিজানের স্ত্রীর নামেও অবৈধ সম্পদ


পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহীনুর আয়েশা সিদ্দিকার নামেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনিও একই কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। ১ কোটি ৯৭ হাজার ৫০৩ টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। অভিযোগ আনা হয়েছে, এ অর্থ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ১৪ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (অনু. ও তদন্ত-১) একেএম তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এদিকে গোপন রাখা ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের তথ্যও এখন এ সংক্রান্ত এজাহারে যুক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অনুযায়ী এবার স্বামীর পর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাও চাকরি হারাচ্ছেন। এর আগে দুদকের এ সংক্রান্ত মামলার কারণে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর ‘টাকার মেশিন চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মিজানুর’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়ে অধ্যক্ষের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এ ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দেড় বছর এ মামলার তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট চার্জশিট দাখিল করে। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে গোপন করায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। নথিপত্রে দেখা যায়, একই অভিযোগ মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহীনুর আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধেও। তিনিও ২০২০ সালের ১১ মে ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙেন। এরপর থেকে পরিবার সঞ্চয়পত্র রেজিস্ট্রেশন নং ১৩৮২ বন্ধ রয়েছে। দুদকের উপপরিচালক একেএম তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এজাহারে ৪৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক কারণে গোপন ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চলমান তদন্তে এ সঞ্চয়পত্রের ৪৫ লাখ টাকার তথ্য বের করার চেষ্টা করা হবে। এটা গোপন করার কোনো সুযোগ নেই।’ দুদক সূত্র জানায়, শাহীনুর আয়েশা সিদ্দিকা ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চাটমোহর ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি কলেজ থেকে প্রাপ্ত বেতনভাতা, পরীক্ষাসংক্রান্ত সম্মানি ভাতা এবং করমুক্তসহ মোট আয় করেছেন ২৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আয়কর নথি অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। আর তার দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীতে বলা হয়েছে, সাড়ে ১১ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্জন করেছেন। সব মিলে আয়েশা সিদ্দিকার অর্জিত সম্পদ দাঁড়ায় ১ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয়ের চেয়ে তার ব্যয় ১ কোটি ৯৭ হাজার টাকা বেশি। নিজ নামে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এই টাকা দুদক আইনের ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জানা যায়, দুদকের তদন্তকালে চাটমোহর পোস্ট অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৪৫ লাখ টাকা জমা করেছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা। সেই সঞ্চয়পত্র ভাঙান ২০২০ সালে। তখন তার স্বামী মিজানুর রহমানও ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙেন।