ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলায় রাখা হয়নি বসার স্থান, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা


ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলায় রাখা হয়নি বসার স্থান, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা
ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলার ২৯তম আসর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পূর্বাচলে পুরোপুরি জমে উঠলেও বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না। যতো দিন যাচ্ছে মেলা ততোটা জমে উঠলেও ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। নানা বিতর্কের মাঝে এবার যোগ হলো মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়নি কোনো বসার স্থান। বসার স্থান না থাকায় নিরুপায় হয়ে মেলার বিভিন্ন স্থানে মেঝেতে বসে থাকতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। এতে ম্লান হচ্ছে মেলার সৌন্দর্য্য। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলার ২৯তম আসর যেন নানা বিতর্কের অপর নাম। নিম্ন মানের খাবার, ফুটপাতের পন্য বিক্রি, ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি, টিকিট কাটতে অনলাইনের সার্ভার জটিলতা নানা অভিযোগ রয়েছে মেলা নিয়ে। মেলা নিয়ে এসকল বিতর্কের পাশাপাশি নতুন মেলায় কোনো বসার স্থান রাখা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। মেলা ১৯তম দিন ছুটির দিন না হলেও মেলায় কোনো প্রকার দর্শনার্থীর কমতি ছিল না। এদিনও মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মূখরিত ছিল। প্রতিবছরই দর্শনার্থীরা যাতে মেলায় ঘুরাঘুরির পর বসে বিশ্রাম করতে পারে সে জন্য মূল ভবনের বাইরে দর্শনার্থীদের জন্য বসার বেশকিছু বেঞ্চ রাখা হয়। প্রতিটি আসরেই দর্শনার্থীদের বেঞ্চগুলোতে বসে বিশ্রাম করতে দেখা যায়। তবে এ বছর মেলার মূল ভবনের বাইরে কোনো বেঞ্চ রাখতে দেখা যায়নি। এ বছর কোনো বসার স্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই মেলার বিভিন্ন স্থানে মেঝেতে বসে থাকতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। এতে মেলার ম্লান হচ্ছে মেলার সৌন্দর্য্য। এছাড়া মেলার ভেতরে সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার ও নারীদের বসার কর্ণার ও গণমাধ্যমের বসার জন্য কয়েকটি কক্ষ থাকার কথা থাকলেও এবার কোনো কক্ষ রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মেলা শেষের দিকে হওয়ায় স্টল মালিকরাও পন্য বিক্রি করতে নানা রকম লোভনীয় অফার দিচ্ছে। আর লোভনীয় অফার পেয়ে দর্শনার্থীরাও পন্য কিনছেন নিজেদের পছন্দ মতো। মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে ইলেকট্রনিক, শীতবস্ত্র, প্রশাসধী ও কাষ্মেরী শালের দোকান গুলোতে। মেলার রেস্তোরা গুলোতে যেন কোথাও কোনো বসার জায়গা নেই। রোববার ছুটির দিন না থাকা সত্বেও এশিয়ান বাইপাস, গাজীপুর বাইপাস দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে মেলায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরাও। এছাড়া রাস্তা দখল করে অবৈধ পার্কিং ও অবৈধভাবে বসা ফুটপাতের দোকানতো রয়েছে। এ কারণেও যানজটের পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আলাউদ্দিন নামে এক জুতা ব্যবসায়ী বলেন, মেলা পুরোপুরি জমে উঠায় বিক্রি অনেক ভাল হচ্ছে। তবে প্রতিবছর মেলার ভেতরে বসার জায়গা থাকলেও এবছর বসার জায়গা রাখা হয়নি। এ কারণে দর্শনার্থীরা মেলার বিভিন্ন স্থানে মেঝেতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। যা দেখতে অনেক খারাপ দেখা যাচ্ছে। পাটপন্য বিক্রয় কেন্দ্রের বিক্রয়কর্মী তিশা আক্তার বলেন, মেলায় দর্শনার্থী বাড়ছে বিক্রিও বাড়ছে। তবে বসার জায়গা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। খিলক্ষেত এলাকা থেকে আসা রফিকুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, মেলায় কোথাও কোনো দর্শনার্থীর জন্য বসার জায়গা রাখা হয়নি। এ কারণে পেপার বিছিয়ে মেলার মেঝেতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। প্রতিবছরই মেলার বাইরে বেঞ্চ রাখা হয়। কিন্তু এ বছর রাখা হয়নি কেন বুঝলাম না। রাজধানীর ঢাকার উত্তরা থেকে আসা মনিরা আক্তার বলেন, মেলা এবার অনেক জমে উঠেছে। মেলা এবার যেমন জমেছে তেমনি বিশৃঙ্খলাও হচ্ছে মেলার ভেতরে। খাবারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মেলায় প্রচুর ধুলাবালি। নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে পুরো মেলায়। কথা হয় নাগিস আক্তার নামে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে তিনি বলেন, মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। মেলায় উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মেলায় যানজট পেরিয়ে এসে দেখলাম সদরঘাটের লঞ্চ ঘাটের মতো মানুষ মেঝেতে বসে আছে। যেটি দেখতে খুবই বাজে দেখা যাচ্ছে। যমুনা ইলেকট্রিক এন্ড অটোমোবাইল লিমিটেড বিশেষ ছাড় যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল লিমিটেডের হেড অব সেলস মো. মেজবাহ উদ্দিন আতিক বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মেলায় আমরা উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাইসকুকার, রেফ্রিজারেশন, মাইক্রোওভেন, ইলেক্ট্রনিক ওভেন, গ্যাস বার্নার, কারিকুকার, ইনফারেন্সকুকার, রুমহিটার, ভেন্ডার, মিকসারভেন্ডার ও জুসার,টিভি, ও মোটরসাইকেল এসব গৃহস্থালি পণ্য আমরা বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছি। বিশেষ করে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন, ওয়াশিং মেশিন, আমরা প্রোডাক্ট ভেদে ১০ শতাংশ থেকে ২৫ পার্সেন্ট পর্যন্ত ডিসকাউন্টের অফার করেছি। তবে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ। কিছু ইনোভেটটির প্রোডাক্ট আমরা এখানে নিয়ে এসেছি। টিভির ক্ষেত্রে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপ গোয়িং একটা ১০০ ইঞ্চি টিভি, বাংলাদেশে এই প্রথম সবচেয়ে বড় টিভি নিয়ে এসেছি। তা ছাড়া ৫৫ ইঞ্চি ৪৩ ইঞ্চি ৩২ ইঞ্চি টিভি পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে। এয়ারকন্ডিশনের ক্ষেত্রে ১ টন, ১.৫ টন, ২টন নতুন বিভিন্ন মডেলের বিভিন্ন টেকনোলজির ইমপ্রোস করা কিছু এয়ারকন্ডিশন আমরা নিয়ে আসছি সেখানেও ক্ষেত্রবিশেষ ১০ থেকে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট আছে। তাছাড়া ফ্রিজের ক্ষেত্র ১০ থেকে ১৫ শাতংশ। টিভির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আপনারা সব সময় জানেন যে যমুনা ইলেকট্রিক অ্যান্ড অটোমোবাইল রিচার্জ ইন্ডাস্ট্রি পণ্যের গুণগত মান ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমরা কোয়ালিটিকে সবসময় পায়োরুটি দেই এবং গুণগত মান অন্য কোনো পণ্যের সঙ্গে তুলনা বিহীন। সম্মানিত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের কাছে আমদের চাওয়া আসুন আমাদের প্যাভিলিয়ন ভিজিট করুন আমাদের পণ্যের সমাহার আপনারা উপভোগ করুন এবং আমাদের পণ্যের বিষয়ে আরো জেনে মানসম্মত পন্য ক্রয় করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল পণ্যের গুণগতমানের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমরা কোয়ালিটিকে সবস্ময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। গেইট ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, ছুটির দিন না হওয়ার পরও মেলা অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। এতো লোকের সমাগম হওয়ায়। তারপরও আমরা দর্শনার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে কাজ করে চলছি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ও বানিজ্য মেলা পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, শুক্রবার ও শনিবার মেলার ভেতরে সাংস্কৃতিক কনসার্ট রাখা হয়েছে। এ কারণে মেলার বাইরের জায়গাটি খোলামেলা রাখা হয়েছে। খোলামেলার রাখার কারণে আমরা এবার বেঞ্চ বসাতে পারিনি।