![ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, আশ্বস্ত করল সরকার](https://donetbd.com/wp-content/uploads/2025/02/untitled-11-1739216924.webp)
চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কাজ চলছে বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে সরকার। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সরকার কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছেন (প্রধান উপদেষ্টা)। আশা করব, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে এবং একটি রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেওয়া হবে।’ তবে রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত চাওয়া হয়েছে– চলতি ডিসেম্বরেই চেয়েছেন তারা। সরকারের তরফে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয় উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে জানাবেন।’ সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে কিনা– এ প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানবেন।’রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।এদিকে মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়েই তারা প্রস্তুত হচ্ছেন। একটি ভালো নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প কমিশনের কাছে নেই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তিনি রাজনৈতিক নেতাসহ সবার সহায়তা কামনা করেছেন।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস এবং রাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়। তবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বের পাঁয়তারার অভিযোগ তুললেও গতকালের বৈঠকে তারা সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে বলে মত দিয়েছেন। এ জন্য দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বসছে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন। ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব কথা বলেন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন ছাড়াও তারা বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মব কালচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত শিগগির সম্ভব নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনই বর্তমান সরকারের প্রধান ম্যান্ডেট। তারা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে– ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা কাজ করছেন।এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে আগেও বলেছি, এখনও বলছি– জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে না। আমরা এ ব্যাপারে কোনোভাবেই একমত হবো না।’ তিনি বলেন, বিগত দিনে জাতীয় সংসদের মতোই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে কারচুপি ও অনাচারের আশ্রয় নিয়ে পতিত স্বৈরাচার দলীয় লোকদের বিজয়ী করেছে। এসব ব্যক্তি গোপনে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে, যাতে সরকারের শান্তি ও উন্নয়ন প্রয়াস ব্যর্থ হয়। তাই অবিলম্বে সিটি করপোরেশন ও উপজেলার মতো ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিতে হবে।দেশজুড়ে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে অনেক অভিযান দেখা গেছে। সে ধরনের কোনো পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। এটা নিয়ে যেন কোনো সমস্যা তৈরি করা না হয়। এসব কথা জোরের সঙ্গে তারা বৈঠকে তুলে ধরেছেন।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত। এতে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যে কোনো দলের আত্মপ্রকাশকে আমরা স্বাগত জানাব।বৈঠকে নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, নির্বাচনমুখী অতি আবশ্যকীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকার সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে। এ জন্য তারা দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।বৈঠকে অওয়ামী লীগ ইস্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পতিত ফ্যাসিবাদীরা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে এবং প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের সহায়তায় দেশের বাইরে থেকে এ তৎপরতা চলমান রাখছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা দরকার।দেশে চলমান মব কালচার নিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, পতিত ও পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এ কারণেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলক ভেঙে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই ঘটনাগুলো ঘটেছে। এতে ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিনিয়োগ-বাণিজ্যে স্থবিরতা ও বাজার সরবরাহ ব্যবস্থায় নৈরাজ্য সীমাহীন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দাবি নিয়ে মব কালচারে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নাগরিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ম্রিয়মাণ হতে শুরু করেছে।বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসমক্ষে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।প্রধান উপদেষ্টা কবে নাগাদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সরকার ঠিক করবে। বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক ও গায়েবি মামলা বিষয়ে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা, বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে– এমন একটা ঘোষণা দেওয়ার দাবি আমরা সরকারকে জানিয়েছি।বিএনপি মহাসচিব বলেন, অধস্তন আদালতে যে বিচারকরা রাতের বেলায় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের বহাল রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ বাস্তবায়ন করা জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে।প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসরদের মূল্যায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ মাস পরেও দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে পতিত সরকারের অপকর্ম এবং অপশাসনের দোসররা স্বাচ্ছন্দ্যে বিরাজ করছে।এমনকি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেও পতিত স্বৈরাচারের কিছু দোসর স্থান পেয়েছে। বিতর্কিত ও স্বৈরাচারের দোসর অনেককে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের রাতের ভোট, ভোটারবিহীন ভোট, ডামি ভোট অনুষ্ঠানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা এখনও তাদের সাবেক প্রভুদের ইশরা-ইঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আওয়ামী দোসরদের গোপনে অনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা কিছুই নিয়ন্ত্রণে আসছে না।সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন; অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করুন; দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দিন; প্রশাসনের সর্বস্তর পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করুন।
![](https://donetbd.com/wp-content/uploads/2023/02/logo.jpg)