এবার আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, লোমহর্ষক বর্ণনা
অনলাইন নিউজ ডেক্স

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এবার এক আইন কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণের ঘটনা সামনে এসেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার মনোজিত ‘ম্যাঙ্গো’ মিশ্র নামের প্রধান অভিযুক্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২৪ বছর বয়সি ওই ছাত্রীকে পুলিশে অভিযোগ করতে বাধা দেওয়া যাবে।ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ জুন সন্ধ্যায়। অভিযোগে ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, এই বিভীষিকাময় ঘটনার পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে ফোন করেন এবং তাকে কলেজ থেকে নিয়ে যেতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই মূলহোতা মনোজিত এবং তার সহযোগী প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জায়েব আহমেদ কলেজ ছেড়ে চলে যান।কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, মনোজিত ক্যাসবা থানার (কলেজ থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে) গতিবিধির ওপর নজর রাখতে বন্ধুদের বলে দেন। যাতে বোঝা যায়, ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কি না।ঘটনার পরদিন (২৬ জুন) বিকালে মনোজিত এক কলেজ কর্মচারীকে ফোন করে জানতে চান- পুলিশ ক্যাম্পাসে গেছে কি না। পরে যখন বুঝতে পারেন যে, পুলিশ তাকে খুঁজছে, তখন তিনি নিজের আইনজীবী বন্ধু ও কলেজ সিনিয়রদের সহায়তা চেয়ে ফোন করেন—কিন্তু কেউই তাকে সাহায্য করেননি।ওইদিন (২৬ জুন) সন্ধ্যায় মনোজিত ও জায়েব বালিগঞ্জ রেলস্টেশনের কাছাকাছি ফার্ন রোডে দেখা করেন। সেদিনই সন্ধ্যায় পুলিশ তাদের দুজনকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত প্রমিতকে সেদিন রাতেই নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মূলহোতা মনোজিত স্বীকার করে বলেছেন, প্রমিত ও জায়েব ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ড করেছিল এবং তারা ভেবেছিল, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে।তদন্তে আরও জানা গেছে, ভুক্তভোগী কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মনোজিত তাকে নজরে রাখছিল। তিনি ওই কলেজের সাবেক ছাত্র ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা। বর্তমানে একটি চুক্তিভিত্তিক পদে কর্মরত। ‘ম্যাঙ্গো’ নামে পরিচিত এই যুবক নিজের রাজনৈতিক যোগাযোগকে ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করত।জায়েব ও প্রমিত পুলিশকে জানিয়েছে, ভুক্তভোগী আগে থেকেই মনোজিতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। এতে মনোজিত ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ‘শিক্ষা দেওয়া উচিত’ মনে করে এই পরিকল্পনা করে।তিনি মেয়েটিকে কলেজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার অফার দেন—যা ছিল একপ্রকার ‘চূড়ান্ত ফাঁদ’।উল্লেখ্য যে, এই পদটি ছিল কাল্পনিক। কারণ বহু বছর ধরেই ওই কলেজে কোনো ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম নেই।টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার অন্তত দুই দিন আগেই মনোজিত জায়েব ও প্রমিতকে জানিয়ে দেয় যে, ওই ছাত্রী পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে আসবে। তিনি তাদের নির্দেশ দেন তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আটকে রাখতে।পুলিশ জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে, যা মূলত নির্জন একটি কক্ষ।ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা বিছানার চাদরসহ একাধিক আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।পুলিশ আরও জানিয়েছে, মনোজিতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ১১টি মামলা রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই নারীদের হেনস্তা ও অশালীন আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি এই সব মামলায় জামিনে মুক্ত ছিলেন।সাম্প্রতিক আপডেট:অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
মূল অভিযুক্ত মনোজিত নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে।
ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের পরিকল্পনা ছিল।
তদন্ত চলছে, ফরেনসিক প্রতিবেদন আসা বাকি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
যে প্রশ্ন উঠেছে:কীভাবে এমন অপরাধী এত বছর কলেজে অবাধে ঘোরাফেরা করেছে?
কলেজ প্রশাসন কি জানত না তার আগের মামলাগুলোর কথা?
রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে এই দানবীয় ক্ষমতার উৎস কোথা থেকে এলো?
মূলত, এ ঘটনা শুধু একটি ধর্ষণ নয়—এটি ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ‘দখলদারী সংস্কৃতি’র নির্মম প্রতিফলন। তাই সময় এসেছে, এই ভয়ঙ্কর গ্যাং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজ একসঙ্গে দাঁড়ানোর। সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া
