বিয়ের ঋণেও গলার কাঁটা উচ্চসুদ


বিয়ের ঋণেও গলার কাঁটা উচ্চসুদ
টাকার অভাবে বিয়ে করতে পারছেন না? চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। বেশ কয়েকটি ব্যাংক দিচ্ছে বিবাহ ঋণ (ম্যারেজ লোন)। এছাড়া ভোক্তা ঋণের আওতায় আরও অনেক ব্যাংক এ ধরনের ঋণ দিচ্ছে। সেগুলো একেক ব্যাংক একেক নামে দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে ব্যক্তিগত ঋণ (পারসোনাল লোন), কেউ দিচ্ছে যে কোনো উদ্দেশ্যে ঋণ (এনি পারপাস লোন), আবার কেউ বা দিচ্ছে গাড়ি ক্রয়ে ঋণ (কার লোন)। এসব তথ্য প্রত্যেক ব্যাংকের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। মনে রাখতে হবে, যে কোনো ধরনের ঋণ পুরোপুরি ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। তবে বিপত্তি বর্তমান উচ্চ সুদহার নিয়ে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ঋণে সুদের হার ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ শতাংশে ওঠার পাশাপাশি বিয়েসহ ভোক্তা ঋণেও উচ্চসুদ দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংক এসব ঋণের সুদ কেটে নিচ্ছে সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ। আর শক্তিশালী ব্যাংক সুদ নিচ্ছে সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত উচ্চসুদে বিয়ে তো দূরে থাক, কোনো ঋণই এখন নেওয়া সম্ভব নয়। মূলত এখানে ব্যাংকগুলোর খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ তারল্য সংকটের কারণে উচ্চসুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো বর্তমানে ১১, ১২ ও ১৩ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এর সঙ্গে ন্যূনতম ৫% ঋণ-আমানতে সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) যোগ হলে ব্যাংক ঋণের সুদহার হবে ১১+৫=১৬% কিংবা ১৩+৫=১৮%।জানা গেছে, ব্যক্তিগত ঋণ সাধারণত জামানত ছাড়া দেওয়া হয়। তবে আবেদনকারীর আয়, চাকরির নিশ্চয়তা ও আর্থিক স্থিতি বিবেচনায় ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করে।বিয়ের জন্য ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মিলবে ঋণ। এই ঋণ মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। তবে কিস্তির সংখ্যা বাড়ালে সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে।একজন চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে বিয়ের ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে মূলত আবেদনকারীর মাসিক আয়, চাকরির ধরন, চাকরির অভিজ্ঞতা, বয়স ও লেনদেনের ইতিহাসের ওপর। যাদের স্থায়ী চাকরি এবং আয় বেশি, তারা তুলনামূলকভাবে ঋণ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। সাধারণত মাসিক কিস্তি যেন গ্রাহকের আয়ের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, তা ব্যাংক বিবেচনা করে। তাই কার কত ঋণ মিলবে, তা নির্ধারিত হয় ওই ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্যরে ভিত্তিতে। অন্য পেশাজীবীরাও একই ভাবে ঋণ পাবেন।দেশে বেশকিছু ব্যাংক আছে যারা বিশেষ বিবাহ ঋণ দেয়। এর মধ্যে রয়েছে এনসিসি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউসিবি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইত্যাদি। এছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধায় বিবাহ ঋণ নেওয়া যায়।ব্যাংক সূত্র জানায়-বিয়ে, ভোগ্যপণ্য ক্রয়, চিকিৎসা খরচ, বাড়িঘর সাজানোসহ অন্যান্য খাতে ঋণ পাওয়া যায় এনসিসি ব্যাংক থেকে। ব্যক্তিগত ঋণের আওতায় এসব ঋণ দেয় ব্যাংকটি। বর্তমানে এ ঋণের সুদহার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। এই ঋণের সীমা ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। চাকরিজীবী, জমির মালিক, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাবেন। ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা আয় হতে হবে। বাকিদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাবেন।ডাচ্-বাংলা ব্যাংক যে কোনো উদ্দেশ্যে ঋণ (এনি পারপাস লোন) দেয় ১ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এখানে সুদের হার ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত। এ ধরনের ঋণে ব্র্যাক ব্যাংকের বর্তমান সুদের হার ১২-১৩ শতাংশ।উত্তরা ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিয়ের জন্য ঋণ পাওয়া যায়। এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে বিয়ের জন্য ২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। তবে এই ঋণ ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধার আওতায় নিতে হবে। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাবেন।একইভাবে ইউসিবি বিয়ের জন্য ঋণ দেয়। এই ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, জমির মালিকসহ নানা পেশার লোকজন এই ঋণ পেতে পারেন।বিজিবি সদস্যদের জন্য বিবাহ ঋণ রয়েছে সীমান্ত ব্যাংকে। শুধু বিজিবির কর্মরত সদস্যরাই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। ঋণটি মূলত সংশ্লিষ্ট সদস্যের নিজের বিয়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রেও এই ঋণ নেওয়া যাবে। সাধারণ সদস্যদের জন্য এই ঋণের সীমা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণ পেতে হলে আবেদনকারীকে বিজিবির স্থায়ী সদস্য হতে হবে এবং ন্যূনতম ৬ বছর সক্রিয় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তবে সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাবে।বিয়ের জন্য ঋণ পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, চাকরির প্রমাণপত্র (যেমন আইডি কার্ড, নিয়োগপত্র), সর্বশেষ ৩ থেকে ৬ মাসের পে-স্লিপ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, কর শনাক্তকরণ (টিআইএন) সনদ এবং কিছু ক্ষেত্রে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) প্রয়োজন হয়। এছাড়া যেহেতু এই ঋণ নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, তাই প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের কার্ড, চিকিৎসার কাগজ বা ভ্রমণ পরিকল্পনার কপি দিতে হতে পারে। এর সঙ্গে বর বা কনের সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি চাইতে পারে ব্যাংক। এদিকে বিয়ের জন্য টাকা জমানোর ব্যবস্থা রেখেছে ওয়ান ব্যাংক। ‘বিবাহ সঞ্চয়’ নামের স্কিমটিতে ১০ বছরের জন্য ১১%, ৮ বছরের জন্য ১০.৭৫%, ৫ বছরের জন্য ১০.৫০% এবং ৩ বছরের জন্য টাকা রাখলে সুদ দেবে ১০%।