চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকানের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : পুলিশ


চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকানের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : পুলিশ
মিটফোর্ডের সোহাগ হত্যাকাণ্ডে চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, তবে ভাঙারি দোকানের নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরেই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।শনিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগ হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।উপ-কমিশনার বলেন, পারস্পরিক ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড। আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।তিনি বলেন, নিহত সোহাগ হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিরা একইসঙ্গে ভাঙারির ব্যবসা করে আসছিলেন। তবে শুধুই কি ব্যবসা, নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ভিডিও ও সাক্ষীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান লালবাগের এই উপ-পুলিশ কমিশনার জসীম উদ্দিন।এর আগে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিজ দোকান থেকে বের করে হত্যা করা হয় শত শত জনতার সামনে। তারা তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং মাথা থেঁতলে নিশ্চিত করে তার মৃত্যু। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।সোহাগকে হত্যার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকা রাস্তায় অর্ধবিবস্ত্র হয়ে শুয়ে পড়ে আছে সোহাগ। তখন তার শুধু নিঃশ্বাসটুকু চলছিল। এ সময় রাস্তা থেকে একটি বড় কংক্রিটের অংশ হাতে তুলে নেয় হালকা আকাশি রঙের শার্ট এবং জিন্সের প্যান্ট পরিহিত রিয়াদ। মাথার ওপরে কংক্রিটের অংশ তুলে সজোরে কোমর আর বুকের মাঝখানে আঘাত করে সে। এ সময় সোহাগ দুই হাত আর দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। এরপর একদম বুক বরাবর আবার আঘাত করে। তখন গোল গলার টি-শার্ট আর গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহিত সজীব একপাশ থেকে হেঁটে এসে আরেকটা বড় কংক্রিটের অংশ মাথায় তুলে একদম মুখের মধ্যে আঘাত করে। এরপর আরেকটি ইট নিয়ে এসে মাথায় আঘাত করে ছোট মনির, পাশ থেকে আবার মাথায় আঘাত করে লম্বা মনির, আর তাদের ইট এগিয়ে দেয় নান্নু। এভাবে বারবার মারতে মারতে মাথা থেঁতলে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সোহাগের। আর এই পুরো হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন মহিন এবং অপু দাস। মাথা থেঁতলে মৃত্যু নিশ্চিত করা ছোট মনির মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী, নান্নু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার এবং বড় মনির, রিয়াদ ও সজীব যুবদল নেতা মহিনের কর্মী।এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারনামীয় আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় আসামি তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। তা ছাড়া র‌্যাব এজাহারভুক্ত আসামি মনির ও আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে হাসানকে ৫ দিনের জন্য এবং রবিনকে দুদিনের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।ডিসি তালেবুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।মিটফোর্ড হাসপাতাল ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা ডিএমপি প্রাথমিক তদন্ত ভাঙারি ব্যবসা