মা বাবার প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব


মা বাবার প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব

মা বাবার সেবা করার চেয়ে বড় ধর্ম,বড় কর্ম আর কিছুই নেই এই জগৎ সংসারে। প্রায় সকল ধর্মেই বাবা-মাকে সেবা করার কথা বলা হয়েছে। বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও যত্ন নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত । এটি ধর্মীয় অনুশাসন এবং সামাজিক মূল্যবোধের উভয় ক্ষেত্রেই স্বীকৃত। মা-বাবার জীবদ্দশায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাদের খোঁজখবর ও দেখভাল করাই হচ্ছে সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

গণমাধ্যমে সদাশ্রুত যে, সন্তান কর্তৃক অসুস্থ ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি অবহেলার রোমহর্ষক ঘটনার কথা I এসব ঘটনা যেমন সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না, তেমনি তার পুনরাবৃত্তিও কাম্য নয়। মানুষ হিসেবে এসব অবশ্যই লজ্জার। আর মুসলমান হিসেবে তো এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। অবশ্য প্রত্যেক ধর্মেই বাবা-মায়ের সেবাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে I
কয়েকদিন আগে একটি নিউজে দেখলাম মাকে হাঁস মুরগি রাখার স্থানে ঘুমাতে দিয়েছে কারণ ঘরে তাদের বাচ্চাদের থাকার রুম ছাড়া আর কোন রুম নেই। চিন্তা করা যায় এই কুলাঙ্গারকে ১০ মাস ১০ দিন পেটে রেখেছে মা কত কষ্ট করে। তারপর জন্মের পর মাটিতে রাখেনি পিপড়ায় কামড় দিবে বলে ।আজ সেই ছেলের মার জন্য ঘরে জায়গা নেই !

আরেকটা নিউজ দেখলাম মা তাঁর নিজের গয়না বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছে উচ্চশিক্ষিত করার জন্য। ছেলে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে আসলে মা উচ্চশিক্ষিত মেয়ের সাথে বিয়ে দেন। মা রা তো এমনই চায় তাই না? অথচ বিয়ের কয়েক বছর পর ছেলে আর বউমা মিলে মাকে বৃদ্ধাশ্রম রেখে আসে। হায়রে দুর্ভাগা তোকে মানুষ করার জন্য তোর মা তাঁর শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দিয়েছিল। আজ তাঁর প্রতিদান কি এই?

ইদানীং আবার শুরু হয়েছে জায়গা জমি বাবা মার কাছ থেকে লিখে নিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, সেইদিন পত্রিকাতে দেখলাম মাকে কেউ কখনো দেখাশুনা করেনি অথচ মা মারা যাবার পর দাফনের পূর্বে হাতের টিপ রেখে দেয় জায়গা সম্পতির জন্য। আরেকটি নিউজ দেখলাম গাজীপুরের শ্রীপুরে লোভী মেয়ে জায়গা সম্পতির জন্য মাকে গলা কেটে মেরে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে। এই বাবা মা যদি জানতো তাদের ছেলে মেয়ে বেয়াদব, দুশ্চরিত্র ,লোভী ,স্বার্থপর হবে তাইলে কোনদিনই ওদের জন্ম দেওয়ার কথা চিন্তা করত না।
আমেরিকাতে এই তো সেই দিন একজন ফোন দিয়ে জানালো তাঁর এক বন্ধু তাঁর মাকে দেশ থেকে আমেরিকা এনেছিল। সে ভালো চাকুরী করে তাঁর বউও ভালো চাকুরী করে ভালই চলছিল সংসার। শুধু মা দেখলো তাঁর ছেলে ঠিক মতন দেশী খাবার খেতে পারছে না। মার মন সব সময় সন্তানের জন্য কাঁদে। তাই মা আজ ছেলের জন্য ভালো করে মাছ ভেঁজে তরকারি বানিয়েছে। আজ ছেলেকে দেশী খাবার নিজের হাতে খাওয়াবে। বিধিবাম, বউ ঘরে ঢুকে চিল্লাতে চিল্লাতে বলেছে তোমাকে কে বলেছে রান্না করতে? ওমাগো! ঘরের ভিতরে শুধু মাছের গন্ধ, আমি কিভাবে আজ ঘুমাব! শাশুরিমা বলতেছে বউমা কিছুক্ষণ পরে ঠিক হয়ে যাবে। হ্যাঁ এইটা কি বাংলাদেশ পেয়েছেন যা খুশি রান্না করবেন আর খাবেন। এইটা আমেরিকা আমার বাড়ির অবস্থা শেষ করে দিয়েছে। আরও যা আসছে মুখ দিয়ে তাই বলেছে। বউমার এই রকম ব্যবহার দেখে শাশুড়ি রুমে চলে গেল। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবল ছেলেকে কথাগুলো বুঝিয়ে বলবে । সকালে ছেলের কাছে মা যাওয়ার সাথে সাথেই ছেলে বলতে শুরু করল, তুমি কেন রান্না করতে গেলে। তোমাকে আর রান্না করতে হবে না। আমি তোমাকে আমার বাসায় এনে ভুল করেছি। ঠিক এক সপ্তাহ পরে মাকে টিকেট কেটে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় ছেলে। ভাবতে পারেন যেই মা কত কষ্ট করে ১০ মাস ১০ দিন পেটে রেখেছে তারপর বড় করেছে এবং জমি জমা বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছে। আজ সেই ছেলের মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে মার থাকার জায়গা নেই। আর হতভাগা তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে! তুই তোর বউর কথা শুনে মাকে দেশে পাঠিয়ে দিলে। মাকে কিছুই জিজ্ঞেস করলি না? আরে মা তো তোর জন্যই সেদিন মাছ রান্না করেছিল। কারণ তুই মাছ অনেক পছন্দ করিস।

পরিশেষে বলব তোমরা তোমাদের মা বাবাকে সম্মান করো জীবিত থাকতে। মরার পরে মানুষ দেখানোর জন্য গরু কেটে খাওয়ানো আর চোখের দুফটা পানি ফেলানো মানুষকে দেখানো এসব আদর্শ সন্তানের চরিত্র হতে পারে না। উপরওয়ালা একজন আছেন তিনি সবই দেখছেন এবং একদিন তিনি তাঁর বিচার করবেন। তখন তুমি কান্নাকাটি করেও কোন লাভ হবে না। হে বিধাতা এখনো যে সমস্ত কুলাঙ্গারগুলো মা বাবার খেদমত করে না। তুমি তাদের খেদমত করার মতো মন মানসিকতা দান করে দাও। তাঁদেরকে সঠিকভাবে মা বাবার দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করো ।

ড.আব্দুস সাত্তার
লেখক ও সাংবাদিক
ওয়াশিংটন ডি সি
০৭/২৫/২৫