অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা চায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা এহসান ধ্রুবের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ শিক্ষক এ বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে শিক্ষকবৃন্দ বলেন, এহসান ধ্রুবর আত্মহত্যাচেষ্টা ও শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে এজন্য সম্ভাব্য দায়ী করে আবর্তিত ঘটনাক্রম আমরা গত কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নীরবতাও পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। স্বস্তির বিষয় এহসান ধ্রুব এখন শারীরিকভাবে সুস্থ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটাননি। তারা বলেন, পুরো ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমের যে ভূমিকা, তা যথাযথ ছিল এবং একজন সচেতন শিক্ষকের দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন। নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করতে সচেতন শিক্ষকের কাজটিই তিনি করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার সহপাঠীদের বিবৃতিতে ও বর্ণনায়ও অধ্যাপক তানজীমের ভূমিকাটি সঠিক ছিল বলেই মনে হয়েছে। অধ্যাপক তানজীমের বক্তব্যে আমরা জেনেছি ধ্রুবর ছাত্রলীগসংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না। বরং ধ্রুবই তার এই পরিচয়কে তার ইমেইলে সামনে আনেন এবং ঘটনাটিতে তার রাঙানো রাজনৈতিক পরিচয়ের জের ধরেই ছাত্রলীগের সদস্যরা অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়। তারা বলেন, নানা সূত্রে জানা গেছে, ধ্রুব যার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছিলেন, সেই মেয়েটির কাছে অতীতে প্রেমপ্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এবং তিনি এই ঘটনার পূর্বে মেয়েটির বিরুদ্ধে আন্তঃব্যক্তিক পর্যায়ে ও সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা ছড়িয়েছেন, যাকে পরিকল্পিত বাচিক নিপীড়ন হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা নিরসনে শিক্ষকদের ন্যায়ের পক্ষেই অবস্থান নিতে হয়। অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান সকলের সামনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে উদ্যোগ নিয়ে ঠিক কাজটিই করেছেন। এই চেষ্টাকে কোনো ভাবেই ‘র‍্যাগিং’ বলা চলে না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে শিক্ষকের এটাই যথোপযুক্ত আচরণ। তারা বিবৃতিতে আরও বলেন, নারী শিক্ষার্থীর ওপর ধ্রুবর বাচিক ও মানসিক নিপীড়নের শাস্তি দাবি করছি। এই ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা শিক্ষার্থীর মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা আশা করছি প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ঘটে যাওয়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংবেদনশীলতার সঙ্গে পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, তারা দ্রুতই অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং নারী শিক্ষার্থীর আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করবে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতা ধ্রুব অধ্যাপক তানজীমউদ্দিনের বিরুদ্ধে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ওই রাতে শিক্ষকের বিচার দাবি করে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে এহসানকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন তিনি সুস্থ আছেন।