মঙ্গলে যমজ যান পাঠাতে উড়ল ব্লু অরিজিনের রকেট
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বিশ্বের মহাকাশপ্রিয় লাখো মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল যে মুহূর্তের জন্য, অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেই সঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়ল ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দুটি মহাকাশযান পেটে নিয়ে লোহিত গ্রহ মঙ্গলের উদ্দেশে ব্লু অরিজিন সফলভাবে নিউ গ্লেন বুস্টার রকেট উৎক্ষেপণ করে। একই সঙ্গে উৎক্ষেপণের পর রকেটের প্রথম ধাপের বুস্টারটি নির্দিষ্ট স্থানে নিরাপদে অবতরণ করাতেও সক্ষম হয়েছে তারা।
এ দিন ব্লু অরিজিনের গবেষকরা রকেট বুস্টারটি নিখুঁতভাবে ভাসমান প্ল্যাটফর্মে অবতরণ করানোর পর উপস্থিত সবাই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। এর আগে কেবল আরেক ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এমন সফল অবতরণের কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছিল। নাসা সম্প্রতি তাদের পরিকল্পিত চন্দ্রাভিযানের জন্য দরপত্র আহ্বান করার ফলে দুই ধনকুবেরের মালিকানাধীন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ব্লু অরিজিনের এই অর্জন এলো।
এর আগে পৃথিবী এবং মহাশূন্য উভয় স্থানের আবহাওয়াজনিত কারণে ব্লু অরিজিনের উৎক্ষেপণটি বেশ কয়েক দিন ধরে স্থগিত ছিল। এর মধ্যে গত রোববার প্রথম রকেটটি উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পৃথিবীর আবহাওয়ার কারণে তা স্থগিত হয়। এরপর বুধবার মহাশূন্যে ‘অত্যন্ত উচ্চ সৌর কার্যকলাপের’ কারণে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে যায় উৎক্ষেপণ। বলা হচ্ছে, রকেটটির ইতিহাসে দ্বিতীয় ফ্লাইটে ব্লু অরিজিন সফলভাবে বুস্টারটি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে, যা এটিকে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তুলবে।
এদিকে মঙ্গলের উদ্দেশে ব্লু অরিজিনের রকেটের সফল উৎক্ষেপণে সংস্থার কর্মকর্তা ও গবেষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নাসার প্রধান হিসেবে মনোনীত ইলন মাস্কের সহযোগী জ্যারেড আইজ্যাকম্যানও এক্স পোস্টে ব্লু অরিজিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে এক্সে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন ইলন মাস্ক নিজেও।
জানা গেছে, ৩২২ ফুট বা ৯৮ মিটার লম্বা নিউ গ্লেন রকেটের কাজ হবে নাসার বানানো ‘ব্লু’ এবং ‘গোল্ড’ নামে দুই যমজ মহাকাশযানকে মঙ্গলের কক্ষপথের দিকে ছুড়ে দেওয়া। নাসার মহাকাশযানগুলোর লক্ষ্য হলো লালগ্রহের জলবায়ু ইতিহাস অধ্যয়ন করা। এই গবেষণার চূড়ান্ত আশা হলো ভবিষ্যতে প্রতিবেশী গ্রহটিতে মানুষ পাঠানো। নাসার হেলিওফিজিসিস্ট জোসেফ ওয়েস্টলেক জানান, মহাকাশযান দুটি প্রথমে একটি নিরাপদ পার্কিং কক্ষপথ খুঁজে বের করবে যাতে তারা পৃথিবীর মহাকাশ আবহাওয়ার পরিমাপ নিতে পারে। এরপর ২০২৬ সালের শরতে যখন মঙ্গল পৃথিবীর কাছাকাছি পৌঁছাবে, তখন মহাকাশযানগুলো আমাদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণকে ব্যবহার করে জোর ধাক্কায় মঙ্গলের দিকে যাত্রা শুরু করবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালে মহাকাশযান দুটি মঙ্গলে পৌঁছাবে।
ব্লু অরিজিনের এই রকেট উৎক্ষেপণকে বিশেষভাবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এই প্রথম নাসা বেসরকারি উদ্যোগে মঙ্গল অভিযান করছে। খবর এএফপির।
