ধানের বাম্পার ফলন কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হোক


দেশে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। রোববার খবরে প্রকাশ, শেরপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওড়গুলোয় পুরোদমে চলছে ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর কাজ। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে ধান ঘরে তুলেছেন। কিন্তু সোনার ধানে ঘর-আঙিনা ভরে উঠলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। কারণ, সরকার এবার ধানের দাম মনপ্রতি ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও কেনা শুরু করবে ৭ মে থেকে। ফলে কৃষক চাষাবাদের খরচের দেনা শোধ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে এখনই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কতিপয় ফড়িয়া ও আড়তদার এ সুযোগ নেওয়ায় কৃষক পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য।জানা গেছে, ফসল ফলাতে গিয়ে সার, কীটনাশক, ধান কাটার খরচসহ সব খাতে কৃষকের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে; কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এখন তাদের মনপ্রতি মানভেদে ৭২০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ একজন ধান কাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরিই দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। এদিকে আড়তদাররা বলছেন, বাজারে আমদানি বেশি, চাতাল মালিকরা নাকি এ কারণে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। আড়তদারদের এ ধরনের বক্তব্য কতটুকু সত্য, তা তদন্তের দাবি রাখে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে ৫ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যদি এ ক’দিনে ফড়িয়ারা কৃষকের কাছ থেকে কমমূল্যে ধান সংগ্রহ করে পরে তা সরকারের কাছে বিক্রি করে, তবে স্বভাবতই লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে।ভুলে গেলে চলবে না, কৃষিপ্রধান এ দেশের মোট জনশক্তির অধিকাংশই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থেই কৃষকের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে কৃষক যেন দুর্দশাগ্রস্ত না হন, এজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবার খাদ্যের জোগান দিতে কৃষক যেভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন, তা স্মরণে রেখে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতি বছর ধানের দাম নির্ধারণ ও ক্রয়ের উদ্যোগ যেন সময়োপযোগী হয়, সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট তৈরি করে চাল নিয়ে চালবাজি করতে না পারে, সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।