প্রথম দিন : শুরুর মতো হলো না বাংলাদেশের শেষটা


প্রথম দুই সেশনে যে ছন্দে ছিল বাংলাদেশ, যে আক্রমণে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে রেখেছিল, আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের চাকায় লাগাম টেনেছিল, শেষ সেশনে তালগোল পাকানো পারফরম্যান্সে দিনটাই এলোমেলো করে দিল। বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে দিনের শুরু ও মধ্যভাগে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ছড়িয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকাশে, শেষ সেশনে তা হুট করেই উধাও।অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা স্বাগতিকদের বিষন্ন হলেও শেষটা হয়েছে আনন্দমাথা। পশ্চিমে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিবীয়ানদের মুখে হাসিও যেন আরো চওড়া হতে থাকে। স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ২৫০ রান নিয়ে দিন শেষ করা স্বস্তিদায়ক অবশ্যই। অথচ প্রথম সেশনে তাদের স্কোরবোর্ডে রান ছিল ২ ‍উইকেটে ৫০। দ্বিতীয় সেশনে ৩ উইকেটে ১১৬, মানে ৬৬ রান যোগ হয়। বাংলাদেশের ‘যন্ত্রণার’ শেষ সেশনেই এসেছে ১৩৪ রান।রান রেটের হিসেবটা দিলে অবাক হতেই হবে। প্রথম সেশনে রান রেট ২.১৭। দ্বিতীয় সেশনে ২.১৩। আর শেষ সেশনে ৪.৪৭। যার কৃতিত্ব লুইস ও আথানেজের। স্বাগতিক এই দুই ব্যাটসম্যান রীতিমত দিনটা ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের থেকে। দিন শেষে অবশ্য তাদের কারো মুখে হাসি নেই। কেননা নার্ভাস নাইন্টিজে দুজনই ফিরেছেন সাজঘরে।লুইস ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। আজ দ্বিতীয় ফিফটিকেও পারলেন না তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে। ৯০ রানে মিরাজের হাতে জীবন পাওয়ার পর ৭ রান যোগ করে তার বলেই স্লিপে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। প্রতি আক্রমণে খেলার সুর পাল্টে দেওয়া আথানেজ থামেন ৯০ রানে। তাইজুলের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন। নষ্ট হয় তার প্রথম সেঞ্চুরির সুযোগ। ১৩০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে ড্রেসিংরুমের লম্বা পথ তাকে পাড়ি দিতে হয়।টেস্টে ভারতের লজ্জা... সাত সকালে নতুন বলে উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ১৪ ওভার পর্যন্ত। শুরুতে শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ আক্রমণে আসেন। অষ্টম ওভারে হাসানকে বিরতি দিয়ে তাসকিনকে বোলিংয়ে আনেন মিরাজ। তিন পেসারের বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত। আলগা বোলিং কেউ-ই করেননি। অফস্টাম্পের বাইরের চ্যানেলে ধারাবাহিক বোলিং আক্রমণে দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখেন।তাসকিন ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়ে যান পরপর দুই ওভারে। প্রথমে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ক্রেইগ ব্যাথওয়েটকে ফিরিয়েছে। ফুলার লেন্থ ডেলিভারী ভেতরে ঢুকে ব্যাথওয়েটের প্যাডে আঘাত করে। তাসকিনের আবেদনে আম্পায়ার কুমার ধর্মাসেনা আঙুলে তোলেন। ক্যারিবীয়ান অধিনায়ক রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি। ৩৮ বল উইকেটে কাটিয়ে ৪ রানে ফেরেন সাজঘরে।তিনে নামা কেসি কার্টি তাসকিনের ফাঁদে পড়েন। ফুলার লেন্থ সুইং ডেলিভারীতে ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন কার্টি। বল মাঝ ব্যাটে লেগে সোজা চলে যায় মিড উইকেটে তাইজুলের হাতে। নিরাপদ হাতের মুঠোয় জমা হয়ে বাংলাদেশ পেয়ে যায় দ্বিতীয় সাফল্য। সেটাও ২৫ রানে।তৃতীয় উইকেটে হাল ধরার চেষ্টা করে সকালের সেশন কাটিয়ে দেন ওপেনার মিকাইল লুইস ও কাভিম হজ। দুজনের রক্ষণ্মাতক এবং ঢিলা ব্যাটিংয়ে টপ এজে দুয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য সেসব ছিল ফিল্ডারের একেবারে নাগালের বাইরে। বিরতির আগে ওপেনার মিকাইল লুইসই স্লিপ কর্ডন এবং মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। ফিল্ডার না থাকায় বেঁচে যান।বিরতির পর ডানহাতি ব্যাটসম্যান তাসকিনকে দৃষ্টিনন্দন ব্যাকফুট পাঞ্চে চার মেরে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি। ১০৪ বলে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসটি তেমন মন ভরাতে না পারলেও স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করে। তবে সতীর্থরা যেভাবে হাল ছেড়ে দিচ্ছিলেন তাতে তার ধীর গতির ইনিংসটি হয়ে উঠে মহামূল্য। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ একটি সাফল্য পায়। ৩১ ওভারের খেলায় ৬৬ রান খরচ করলেও বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত। এবারও আলগা বোলিং করেননি তিন পেসার ও দুই স্পিনার মিরাজ এবং তাইজুল। বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন হজ। ফাইন লেগে বল ঠেলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। ওখানে ক্ষিপ্র তাইজুলের থ্রোতে উইকেট ভাঙেন লিটন। তাতে ভাঙে ১৩০ বলে ৫৯ রানের হজ ও লুইস জুটি। সেখান থেকে চা-বিরতি পর্যন্ত আলিক আথানজকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবে কাটিয়ে দেন লুইস।শেষ সেশনের প্রথম ১০ ওভারে ৫৯ রান তুলে নেন দুজন। পরের ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আরো ৪৮। বাউন্ডারির সমারোহে দুই ব্যাটসম্যানই অতি দ্রুত পৌঁছে যান নাইন্টিজে। কিন্তু মিরাজ ও তাইজুল তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। মিরাজ প্রথম স্লিপে জয়ের হাতে লুইসকে তালুবন্দি করান। আথানেজ তাইজুলের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।১৯ বলের ব্যবধানে বাংলাদেশ দুই থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে শেষটায় কিছুটা মান বাঁচায়। তবে দিনের শুরুটা যেমন হয়েছিল, শেষটা সেভাবে হলে বাংলাদেশের জন্য রঙিন হয়ে থাকত।