পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও ভোগাচ্ছে তেল ও চিনি


পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও ভোগাচ্ছে তেল ও চিনি
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিনি ও তেলের দাম নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। ১৯ মার্চ সচিবালয়ে এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় ব্যবসায়ীরা শিগগিরই দাম কমানোর আশ্বাসও দিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখতে চান। অন্যথায় হার্ডলাইনে যাবে সরকার। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পর্যাপ্ত চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে এবারও। দুই মাস আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে দাম। আরও কমা উচিত। সরকার সম্প্রতি শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এর সুফল পাওয়া উচিত ভোক্তাদের। ডলারের দাম অস্থিতিশীল থাকায় অতিরিক্ত পণ্য আমদানির পরও কিছু পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। মাহবুবুল আলম ব্যবসায়ীদের সংগঠন চিটাগাং চেম্বারেরও সভাপতি পদে আছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন ভোজ্যতেল মজুত আছে। এ ছাড়া পাইপলাইনে আছে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন। আবার সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আব্দুল মোনেম এবং দেশবন্ধু সুগার লিমিটেডের কাছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৬৮ টন চিনি মজুত আছে। এর বাইরে পাইপলাইনে আছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সবচেয়ে বেশি মজুত ভোজ্যতেল ও চিনি আছে এস আলম গ্রুপের কাছে। গ্রুপটির কাছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৯ টন ভোজ্যতেল এবং ৮৬ হাজার ৯৮ দশমিক ৬৮ টন চিনি মজুত আছে। এর বাইরে তাদের ১ লাখ ৮ হাজার টন ভোজ্যতেল এবং ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন চিনি পাইপলাইনে আছে। মেঘনা গ্রুপের কাছে ভোজ্যতেল মজুত আছে ৪৬ হাজার ২৩৯ টন। আর পাইপলাইনে আছে তাদের ২২ হাজার টন ভোজ্যতেল। এ শিল্প গ্রুপটির কাছে চিনি মজুত আছে ৫০ হাজার টন। আর পাইপলাইনে আছে তাদের ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি। সিটি গ্রুপের কাছে ২৩ হাজার ৮৬৪ টন ভোজ্যতেল এবং ৬৬ হাজার ৮৬৫ টন চিনি মজুত আছে। আর পাইপলাইনে ভোজ্যতেল রয়েছে ৩২ হাজার টন এবং চিনি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫৫০ টন। টিকে গ্রুপের কাছে ২১ হাজার ৭৫০ টন ভোজ্যতেল মজুত আছে। এর বাইরে পাইপলাইনে আছে ৪৬ হাজার টন। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের কাছে ২৩ হাজার ৯৪১ টন ভোজ্যতেল মজুত আছে। ৩২ হাজার ৮৪৫ টন পাইপলাইনে আছে। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ২ হাজার ১০০ টন ভোজ্যতেল মজুত আছে। আর ৩৫ হাজার টন ভোজ্যতেল আছে পাইপলাইনে। আব্দুল মোনেমের কাছে চিনি মজুত রয়েছে ১৯ হাজার ১০০ টন এবং ৬০ হাজার টন চিনি পাইপলাইনে আছে। দেশবন্ধু সুগার লিমিটেডের চিনি মজুত আছে ৩ হাজার ৫০০ টন এবং পাইপলাইনে আছে ৪০ হাজার টন। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চিনিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়ের সুফল পেলে চিনির দাম কেজিতে অন্তত সাড়ে ৪ টাকা কমত বলে মনে করেন খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেটি হয়নি। গত তিন মাস ধরে বর্ধিত দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। একই অবস্থা ভোজ্যতেলেও। আন্তর্জাতিক বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম এখন অনেক কম। কিন্তু দেশে নেই এর সুফল। এনবিআর সূত্র জানায়, গত বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এক টন সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ১ হাজার ৭১০ ডলার। গত মাসে তা কমে ১ হাজার ৬০০ ডলার হয়। কেন দাম কমছে না ভোজ্যতেল ও চিনির– এমন প্রশ্নের জবাব পেতে শীর্ষ দুই আমদানিকারকের একাধিক পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা কেউ স্বনামে জবাব দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, ডলারের দাম ওঠানামার কারণে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজার কিছুটা অস্থির। তবে অসহনীয় পর্যায়ে নেই। শুল্ক ছাড়ের সুফল শিগগির ক্রেতাদের দেবেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফলও ক্রেতারা পাবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে। এখনও বেশি দামে কেনা পণ্য বাজারে থাকায় রমজান শুরুর আগে এ দুই পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে দ্বিমত পোষণ করে ক্যাবের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুযোগ বাংলাদেশ কখনও পেয়েছে বলে তাঁর মনে হয় না। দাম কমলে অজুহাত হিসেবে আসে ডলার। আবার ডলার কমলে সামনে আনে জাহাজ ভাড়া। এসব যাচই-বাছাই করার কর্তৃপক্ষ দুর্বল বলে এমনটি বলে পার পাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ডলারের দাম এবার কিছুটা বাড়তি ছিল, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু শুল্কও তো ছাড় দিয়েছে সরকার। সেটির সুফল কেন পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এটি অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।