অনলাইনে রিসেলার ব্যবসা কি বৈধ?
অনলাইন নিউজ ডেক্স

রিসেলার হলেন সেই ব্যক্তি যে কোন পণ্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য মার্কেটিং করে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করে লাভ অর্জন করেন।অনলাইন দুনিয়ায় যাদের সামান্যতম বিচরণ আছে তারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে রিসেলার ব্যবসা নামটি শুনেছেন। বর্তমানে যতগুলো কম টাকায় লাভজনক ব্যবসা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো এই রিসেলিং ব্যবসা।এই আর্টিকেলে আমরা এর শরয়ী দিক নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
অনলাইন জগতে রিসেলার ব্যবসা (Reseller Business) এর জন্য একাধিক অ্যাপস রয়েছে। যেমন—মিশো (Meesho), GlowRoad Reselling App, ResellMall, Shop101 Reseller App, Earnkaro ইত্যাদি অ্যাপসগুলো খুবই বিখ্যাত।এ ধরণের আরো অনেক অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে একটি সংস্থা তাদের পণ্যগুলো বিক্রি করার জন্য ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেয় এবং এটির জন্য একটি মূল্যও নির্ধারণ করে।অতঃপর অন্য কোনো ব্যক্তি যদি এসব পণ্য বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে চায়, তাহলে প্রথম সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানটি
এই দ্বিতীয় ব্যক্তিকে (রিসেলারকে) এ কথা বলে যে— আপনিও এসব পণ্যের প্রচার করতে পারেন, এবং এগুলোকে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেন এবং আসল দামের সাথে যে পরিমাণ ইচ্ছা মুনাফা যুক্ত করতে পারেন।সেই মুনাফা সংস্থা কর্তৃক আসল দামের সঙ্গে যোগ করে প্রচার করতে পারেন। (যেমন কোনো সংস্থা একটা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করল ১০০ টাকা, তারপর রিসেলার আরো ৩০ টাকা যুক্ত করে সেই পণ্যের প্রচার করতেছে ১৩০ টাকায় নিতে পারবেন।)এখন যদি কোনো ব্যক্তি এই পণ্যটি কিনেন, তাহলে প্রথম সংস্থা বা কোম্পানি সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্যটি পার্সেল করে পাঠিয়ে দেয়। তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ মূল্য (আসল মূল্য+রিসেলারের মুনাফা উভয়টাই) উসুল করে ফেলেন। এই রিসেলার বা দ্বিতীয় ব্যক্তির মুনাফা তার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন।অনলাইন জগতের এসব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে—ক. প্রথম সংস্থা বা কোম্পানি থেকে কোনো পণ্য রিসেলার ব্যক্তি ক্রয় করে নিজের কাছে নিয়ে আসার আগেই তা পুনরায় তা বিক্রয় করে দেওয়া।(সহজ কথায়—নিজের কাছে নেই এমন পণ্য বিক্রি করা বা কোনো জিনিষ কেনার আগেই বিক্রি করে দেওয়া)খ. সংস্থা বা কোম্পানি এবং ক্রেতার মধ্যে কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করা। নির্দিষ্ট কোম্পানি বা ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করবে।উক্ত দু’টি পদ্ধতির বিধান—প্রথম পদ্ধতিতে (অর্থাৎ কোম্পানি থেকে পণ্য কেনার আগেই তা বিক্রি করে দেওয়া) উল্লেখিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে তা জায়েজ নেই। কেননা এতে পণ্য বিক্রেতার হস্তগত করার শর্ত পাওয়া যায় না।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন— ‘যখন তুমি কোনো পণ্য ক্রয় করবে, তখন তা হস্তগত করার আগে অন্যত্র বিক্রি করবে না।’ [মুসনাদে আহমদ-১৫৩১৬]দ্বিতীয় পদ্ধতিতে অর্থাৎ গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে কেনার জন্য উৎসাহিত করা এবং তাকে প্রস্তত করার মাধ্যমে কমিশন নেওয়া নিম্নোল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হবে।উপরোল্লিখিত অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সম্পাদিত লেনদেন চুক্তি সাধারণত এমনই হয়ে থাকে।১. যে পণ্যের প্রচারণা করছে তা বৈধ এবং হালাল বস্তু হতে হবে।
২. যে ধরণের লেনদেনের জন্য সে মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছে ও প্রচারণা চালাচ্ছে সেটা নাজায়েয লেনদেন হতে পারবে না।৩. উক্ত পণ্যের গুণাবলী ও উপকারিতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে অতিরঞ্জন, মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।
৪. এর গুণমান ও মূল্য বাজারের স্বাভাবিক মান ও মূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।৫. গ্রাহককে ক্রয় করতে উৎসাহিত করার জন্য অবৈধ পন্থা যেমন—জীবজন্তুর ছবি এবং গান সম্বলিত ভিডিও অথবা জীবজন্তুর ছবি বিশিষ্ট ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার করা যাবে না।৬.কমিশন এজেন্ট গ্রাহককে শুধু কেনার জন্য উৎসাহ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হবেনা বরং সে নিজেও এই লেনদেনের মূল কার্যক্রমে অংশ নিবে। সেটা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে চুক্তি সম্পন্ন করার কাজও হতে পারে অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতেও অংশগ্রহণ হতে পারে।মোটকথা, কমিশন এজেন্ট বাস্তবিকপক্ষে কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পাদন করতে হবে।৭. কমিশন উভয়পক্ষের সম্মতি অনুযায়ী সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হবে।সূত্র: দুররে মুখতার ও হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন ৬/৬৩, বিন্নুরি ওয়েবসাইট ফাতাওয়া 144108201303]মূল: জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউন করাচী, পাকিস্তান, অনুবাদ: মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম
