আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: ‘সবাই সব জানে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’


আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: ‘সবাই সব জানে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নয় মাস পর সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে তিনি দেশ ছাড়েন বলে পুলিশের বিশেষ শাখা নিশ্চিত করেছে। এসবি প্রধান গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, আবদুল হামিদ গত রাতে দেশের বাইরে গেছেন। তিনি বিমানবন্দরে যান রাত ১১টার দিকে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি বিমানে চড়ে বসেন। দেশ ছাড়তে তাকে বাধা দেওয়া হয়নি। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে ‘চিকিৎসার জন্য’ থাইল্যান্ডে যেতে দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি হয়েও কীভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। বিষয়টিকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকেই।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুপিসারে নয়, বিমানবন্দরে সব গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই দেশ ছাড়েন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। শুধু নিজে নয়, সঙ্গে নিয়ে গেছেন ছেলে ও শ্যালককেও। ঢাকা ত্যাগের সময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ভিআইপি টার্মিনাল ব্যবহার করেন এবং বিমানবন্দরের সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তিনি প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন। সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের সম্মতি ছাড়া তিনি দেশত্যাগ করেননি। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায়।টিজি বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী আবদুল হামিদ ভিআইপি টার্মিনালে আসলে, টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশনকে বিষয়টি জানান। তিনি আলাদা দুটি সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তারা দুজনই এ বিষয়ে অনাপত্তি দেন। এই অনাপত্তির বিষয়টি ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়।জানা গেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছার পর থেকে দেশত্যাগ পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা কী করেছেন কে কার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গোপনীয় প্রতিবেদনটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে তিনটি সংস্থার কর্মকর্তারা আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার বিষয়টি জানতেন। তারা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঊর্ধ্বতনদের সম্মতি সাপেক্ষে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।রিপোর্টে বলা হয়, টিজি বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী আবদুল হামিদ ভিআইপি টার্মিনালে আসলে, টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশনকে বিষয়টি জানান। তিনি আলাদা দুটি সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তারা দুজনই এ বিষয়ে অনাপত্তি দেন। এই অনাপত্তির বিষয়টি ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ওসি ইমিগ্রেশন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ, প্রাপ্ত অনাপত্তি এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ দেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য যাত্রীর সঙ্গে তার ছেলে ও শ্যালকও বিদেশে গেছেন। এ প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি এবং টেলিফোন নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তাও বলেন, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়টি যারা জানার তারা সবাই জানেন। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে না জানার ভান করা হচ্ছে। তিনি যখন রাত ১১টায় বিমানবন্দরে আসেন। এরপর থেকেই সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়। এখানে সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি তো কোনো অপরিচিত ব্যক্তি নন। তারা বলেন, নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। শুধু পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সবাই সবকিছু জানেন।সাবেক রাষ্ট্রপতির পাসপোর্ট ও ভিসা পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পদাধিকারবলে নিয়মানুযায়ী তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) ব্যবহার করতেন। পরে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট সমর্পণ করে সাধারণ (সবুজ রংয়ের) পাসপোর্ট নেন। সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তিনি ইমিগ্রেশন পার হন। তবে আবদুল হামিদ বিদেশে চলে গেছেন বৃহস্পতিবার এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার পাসপোর্টের তথ্য তলব করা হয়। পরে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে আবদুল হামিদ ও তার পরিবারের সব সদস্যের পাসপোর্টসংক্রান্ত তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।এদিকে এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের রহস্যজনক ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। আবদুল হামিদকে ছেড়ে দেওয়ার দায়ে ‘ছাত্র-উপদেষ্টা’দের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।