আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ উপজেলা ভোটে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা


প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের তিন উপজেলা সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও সন্দ্বীপে আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা। দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘গুরু-শিষ্যের’ ভোটযুদ্ধ নিয়ে চলছে আলোচনা। এ উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে ভোটের মাঠে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি দেখে এখানেও সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, এ অবস্থায় সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও সন্দ্বীপে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে সোমবার জেলা পুলিশ তিন উপজেলার প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সব প্রার্থীকে সতর্ক করেছেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জানিয়েছে, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু করবে পুলিশ। চিহ্নিত ও দাগী সন্ত্রাসীরা যাতে নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বের হয়ে আসতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে তিন উপজেলার নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় আলোচনার ঝড় বইছে। দলীয় প্রতীক হিসাবে নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবার আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছেন। মীরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। তারা হলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা, ফেরদৌস হোসেন আরিফ, উত্তম কুমার শর্মা, মো. এনায়েত হোসেন ও মোহাম্মদ মোস্তফা। সন্দ্বীপ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন, মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, নাজিম উদ্দীন জামসেদ ও আমান উল্লাহ। ভোটাররা বলছেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় বেশিরভাগ প্রার্থীই পেশিশক্তি ও কালো টাকা ব্যবহার করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে প্রচারের শেষ পর্যায়ে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ৮ মে উপজেলা নির্বাচন শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সোমবার সার্কিট হাউজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রার্থীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে ভোটের মাঠে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন একই পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু। সারওয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ-সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) ছোট ভাই। এছাড়া সারওয়ার দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আছেন। অপরদিকে এবারই চেয়ারম্যান পদে প্রথম প্রার্থী হওয়া বাবলু কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সদর আসনের সংসদ-সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী। এক সময় গুরু-শিষ্য হিসাবে পরিচিত সারওয়ার-বাবলু একে অন্যকে দোষারোপ করে দিচ্ছেন পালটাপালটি বক্তব্য। দুই প্রার্থীর বিগত দিনের মধুর সম্পর্ক এবার চরম বিরোধে রূপ নিয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মী ও অনুসারীরাও আছেন বেশ অস্বস্তিতে। বিরোধের কারণে এখন দুজনের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। ২০ এপ্রিল সারওয়ার সংবাদ সম্মেলন করে বাবলুর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া এবং সদর আসনের সংসদ-সদস্যের অনুসারীদের নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ভোটকেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার অভিযোগ করেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাবলু। বাবলু বলেন, সারওয়ার ভাই নিশ্চিত পরাজয় জেনে এর আগেও সংবাদ সম্মেলন করে আবোল-তাবোল বলেছেন। তিনি এখন একা। আমার নেতার (এমপি বাহার) লোকজন নিয়ে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনিই তো বলছেন, নেতাকর্মীদের লাঠি নিয়ে কেন্দ্রে যেতে এবং ভোট দিতে আমাকে, রেজাল্ট নেবেন তিনি (সারওয়ার)।