ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ন্যাটো সম্প্রসারণ বন্ধের শর্ত পুতিনের
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের লিখিত প্রতিশ্রুতি ও কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার রুশ সরকারের ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিন চান পশ্চিমা দেশগুলো নিশ্চিত করুক যে, পূর্ব দিকের দেশগুলোকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এছাড়া ইউক্রেন, জর্জিয়া ও মলদোভাকে ন্যাটো সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়ার নিশ্চয়তাও চাচ্ছেন পুতিন।সূত্রগুলোর একজন বলেছেন, পুতিন শান্তি চান। ওই সূত্র জানিয়েছে, নিজের শর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলে ইউরোপ এবং কিয়েভকে সামরিক অগ্রগতির মাধ্যমে পুতিন দেখাতে চান যে ভবিষ্যতের শান্তি হবে আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল। ক্রেমলিন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও আগেও বহুবার বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের মূলে রয়েছে ন্যাটো সম্প্রসারণ ও পশ্চিমাদের সহযোগিতা। অন্যদিকে ইউক্রেন বরাবরই বলেছে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাক্সক্ষা রাশিয়া ঠেকাতে পারবে না। ন্যাটোও পূর্বে বলেছে, তাদের ‘ওপেন ডোর পলিসি’ রাশিয়ার দাবির জন্য বন্ধ করা হবে না। তবে এবার জোটটি এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠিক মন্তব্য করেনি। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্র্রতিক দিনগুলোতে পুতিনের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বলছেন, কিয়েভের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অনাগ্রহ দেখিয়ে ‘আগুন নিয়ে খেলছেন’ রুশ নেতা।যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার মধ্যেই হামলা পালটা হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাশিয়ার জেলেনোগ্রাদের মাইক্রোন কারখানায় একটি বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। যেখানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, এয়ার ডিফেন্স ও রাডার সিস্টেমের জন্য মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর তৈরি হয়।রাশিয়া জানিয়েছে, হামলা হয়েছে মোট ১৩টি অঞ্চলে। ক্রেমলিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ২৯৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। যাদের মধ্যে ৪০টি ছিল মস্কোর দিকে আক্রমণরত। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে তাদের বিশেষ কিছু বাহিনীসহ ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা ওই অঞ্চলের কাছে মোতায়েন করেছে। বড় ধরনের এ হামলা থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে বিরত রাখার জন্য কিয়েভ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে সুমি অঞ্চলের আরও একটি গ্রাম দখল করেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। পুতিন এর আগে বলেছিলেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন’ চান। তবে মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, রাশিয়া সুমি সীমান্তের প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) ভেতরে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের একটি বড় এলাকা দখল করতে চায়। সুমির গভর্নর ওলেহ হ্রাইহোরভ ফেসবুকে লিখেছেন, নোভেনকে, বাসিভকা, ভেসেলিভকা এবং ঝুরাভকা গ্রাম দখল করেছে রাশিয়া। যদিও বাসিন্দাদের অনেক আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও রাশিয়ান বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ব ইউক্রেনের কোস্টিয়ানটিনিভকা শহরের কাছে ফ্রন্টলাইনের কিছু অংশে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, তাদের বাহিনী গত দুই দিনে ওই এলাকায় রুশ বাহিনীকে ৪ কিলোমিটার (২.৫ মাইল) পিছু হঠতে বাধ্য করেছে।জেলেনস্কির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান পুতিনেরমস্কোকে তিন বছরের আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করার লক্ষ্যে ট্রাম্প এবং পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আহ্বান জানান জেলেনস্কি। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পুতিন যদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, অথবা সবাই যদি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পক্ষে থাকেন, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’ ইউক্রেনীয় নেতা আরও বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের অপেক্ষায় আছি। ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, যদি রাশিয়া না থামে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আমিও চাই তাই হোক।’ তবে জেলেনস্কির সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন পুতিন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, কোনো ধরনের ‘চুক্তি’ হওয়ার পরই কেবল উভয় নেতার মধ্যে বৈঠক সম্ভব। এদিকে, যুদ্ধ বন্ধে এখনও কোনো চুক্তি না হওয়ায় পুতিন ও জেলেনস্কি উভয়ের প্রতিই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
