ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শর্ত দিয়েছে রাশিয়া


ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শর্ত দিয়েছে রাশিয়া
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক তালিকা উপস্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র।তবে মস্কোর দেওয়া এই শর্তগুলো নির্দিষ্টভাবে কী তা স্পষ্ট নয়, এবং রাশিয়া কি এসব শর্ত গৃহীত হওয়ার আগেই কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহী, তাও নিশ্চিত নয়।বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।সূত্রগুলো বলছে, গত তিন সপ্তাহে সরাসরি ও ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা এসব শর্ত নিয়ে কথা বলেছেন।কিন্তু এই শর্তগুলো নতুন কিছু নয়, বরং রাশিয়া পূর্বেও ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে একই ধরনের দাবি তুলেছিল। এর মধ্যে রয়েছে—কিয়েভ ন্যাটোর সদস্যপদ না পাওয়ার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনে বিদেশি সেনা মোতায়েন নিষিদ্ধ করা এবং রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া ও চারটি অঞ্চলকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধের \"মূল কারণ\" হলো ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ, যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটকে সমাধান করতে হবে।এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অপেক্ষা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্তের জন্য, তিনি ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি এই অস্ত্রবিরতিতে রাজি।তবে পুতিন এই অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হবেন কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়, এবং বিস্তারিত শর্তগুলোও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, পুতিন এই অস্ত্রবিরতিকে ব্যবহার করতে পারেন ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে।ওয়াশিংটনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস ও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যকার আলোচনাকে গঠনমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, ৩০ দিনের এই অস্ত্রবিরতি বৃহত্তর শান্তিচুক্তির খসড়া তৈরির সুযোগ করে দিতে পারে।মস্কো গত দুই দশক ধরেই এই ধরনের দাবি জানিয়ে আসছে, যা কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ও হয়েছে।২০২১ সালের শেষ ও ২০২২ সালের শুরুর দিকে, যখন রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছিল, তখনও মস্কো এই একই দাবি তুলেছিল।যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক আলোচনায় ২০২২ সালে ইস্তানবুলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচিত একটি খসড়া চুক্তিকে শান্তি আলোচনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করার প্রসঙ্গও এসেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তি কার্যকর হয়নি।সেই আলোচনায় রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পরিত্যাগ ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের স্থায়ী প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল। পাশাপাশি, ইউক্রেনের যুদ্ধে অন্য দেশগুলোর হস্তক্ষেপের ওপরও নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছিল।বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কী কৌশল গ্রহণ করছে, তা স্পষ্ট নয়। দুই পক্ষ দুটি পৃথক আলোচনায় অংশ নিচ্ছে—একটি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে এবং অন্যটি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে।মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ইস্তানবুলের আলোচনাগুলো সংগঠিত ও ফলপ্রসূ ছিল এবং এটি শান্তি চুক্তির জন্য একটি দিকনির্দেশনা হতে পারে। তবে ট্রাম্পের শীর্ষ ইউক্রেন ও রাশিয়াবিষয়ক দূত অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কিথ কেলোগ বলেছেন, আমাদের সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার এসব দাবি কেবল ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার জন্য নয়, বরং পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা চুক্তির ভিত্তি তৈরি করতেও।রাশিয়া গত দুই দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে, পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি সীমিত করতে হবে এবং ইউরোপে পুতিনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিতে হবে।ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেছেন, রাশিয়া কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত বলে কোনো ইঙ্গিত নেই। তাদের দাবি আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা সত্যিই কোনো অর্থবহ অস্ত্রবিরতি বা শান্তি চায় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।