ইভিএম’র আসন সংখ্যা চূড়ান্ত হতে পারে আজ


জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতগুলো আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে-সেই ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে আজ। এদিন অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কমিশনের ১৬তম সভায় কতসংখ্যক ইভিএম মেরামত করা হবে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মেশিন মেরামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হবে। যদিও ইভিএম মেরামত করতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ইভিএমসহ সভায় গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি এজেন্ডা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জাতীয় সংসদ ও পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত নাগরিকদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া বিষয় আছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে যে সংখ্যক ইভিএম রয়েছে তা দিয়ে কতগুলো আসনে নির্বাচন করা যাবে তা নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হবে। সেখানে কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে তা সচিবালয় বাস্তবায়ন করবে। সূত্র জানায়, কমিশন সভার কার্যপত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হচ্ছে আগামী ২৯ অক্টোবর। আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তিও বৈঠকে তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে জানিয়ে এসব সিটি করপোরেশনে কবে নাগাদ নির্বাচন হবে-কমিশনের কাছে সেই সিদ্ধান্তও চেয়েছে ইসি সচিবালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। ইসির সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই আস্থা অর্জন ছাড়া এ মেশিন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হলে আগের রাতে কেন্দ্র দখলের ঝুঁকি থাকে না। আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটার চিহ্নিত করার পদ্ধতি থাকায় এ মেশিনে জাল ভোটের সুযোগ কম। এ কারণে হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক মেশিন আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করার পক্ষে তারা। সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি এক লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামত করে সচল করা সম্ভব। মেরামতের মধ্যে সব কটি মেশিনের ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে। অনেক মেশিন ভারী মেরামতের প্রয়োজন হবে। এজন্য এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছে বিএমটিএফ। সূত্রমতে, আজকের কমিশন সভায় কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে-সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রতিটি আসনে ভোটার সংখ্যা কমবেশি হওয়ার বিবেচনায় এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ মেশিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। যে কয়টি আসনে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে, সেই সংখ্যা অনুযায়ী ইভিএম মেরামতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। ওই অনুপাতে ইভিএম মেরামতের ব্যয়ের প্রাক্কলনও তৈরি করা হবে এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটে ওই টাকার সংস্থানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি : সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ইসি এ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা কমিশন সভায় তুলে ধরা হবে। ইসির প্রস্তুতিমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে-গত ২ মার্চ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত প্রাথমিক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আগামী ওই নির্বাচনের বিষয়ে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চাইবে ইসি সচিবালয়। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাওয়া পাঁচ সিটি কেেপারেশনের মেয়াদ উল্লেখ করে এসব নির্বাচনের বিষয়ে ইসির দিকনির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে এ বৈঠকে। গাজীপুর সিটির নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে গত ১১ মার্চ। এ সিটির নির্বাচন ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। খুলনা ও রাজশাহী সিটির ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বরিশাল সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৪ মে, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে ভোট করতে হবে। সিলেট সিটি ৬ মে থেকে পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে, ৬ নভেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রবাসী ভোটার : সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করার বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতাসংক্রান্ত একটি আলোচ্যসূচি রয়েছে এ সভায়। ওই দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিন্তু দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস আর্থিক কৃচ্ছ তার স্বার্থে তারাই এ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে প্রতিজন ভোটার করার জন্য সার্ভিস চার্জ হিসাবে ৫০ দিরহাম আদায়ের কথাও জানায়। যদিও নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় প্রথমবার বিনা টাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া এবং ইসির কর্মকর্তা দিয়ে ভোটার নিবন্ধন করার কথা বলা আছে। আবুধাবির দূতাবাসের প্রস্তাব ও ইসির নীতিমালা সাংঘর্ষিক হওয়ায় বিষয়টি কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করছে ইসি সচিবালয়।