ইসরাইল ‘শেষ সীমা’ অতিক্রম করেছে, নাসরাল্লাহর হুঁশিয়ারি


দখলদার ইসরাইল তার ‘শেষ সীমা’ অতিক্রম করেছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ। বৃহস্পতিবার তিনি সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে তার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণের শুরুতে তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী ও ইসলামিক ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। নাসরাল্লাহ সম্প্রতি ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিহত লেবাননের নাগরিকদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি বাহিনী গত দুই দিনে যোগাযোগের ডিভাইস (পেজার) বিস্ফোরিত করে বহু লেবানিজ নাগরিককে হত্যা করেছে। যা একটি বিশাল মানবিক সংকট তৈরি করেছে। নাসরাল্লাহ এ সময় লেবাননের জাতীয় ঐক্যের প্রশংসা করেন এবং এ ঐক্য ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় মানবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি লেবাননের সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান, যারা আহতদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে তিনি ইরাক, ইরান, সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলোর সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন, যারা লেবানন সরকারকে সহায়তা করেছে। নাসরাল্লাহ এ সময় ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইসরাইল রেড লাইন অতিক্রম করেছে। তারা মঙ্গলবার হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা চালিয়েছে। শত্রু রা বুধবারও একই ধরনের বেসামরিক যন্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা করেছে। তবে ইসরাইলের লক্ষ্য অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে এবং হিজবুল্লাহ ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা কমিটি গঠন করেছে বলেও জানান নাসরাল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা এমন এক শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছি, যার প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে। কারণ এটি বারবার পশ্চিমা সমর্থন পেয়ে আসছে। এ রকম বড় আঘাত সত্ত্বেও নাসরাল্লাহ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ভবিষ্যতেও প্রতিরোধ শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মঙ্গলবার এবং বুধবার রক্তাক্ত দিন হলেও, আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো এবং এ আঘাত আমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। নাসরাল্লাহ বলেন, গাজার সমর্থনে আমাদের ফ্রন্ট কার্যকরী হয়েছে এবং এটি শত্রুর ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি শত্রু উত্তরাঞ্চলের ঘটনাগুলোকে তাদের ইতিহাসে প্রথম পরাজয় হিসেবে বর্ণনা করেছে। যা লেবানন থেকে পরিচালিত প্রতিরোধের কার্যকারিতার আরেকটি প্রমাণ। তিনি বলেন, ইসরাইলি বাহিনী লেবাননের ফ্রন্টকে গাজার ফ্রন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং লেবাননের জনগণ ও হিজবুল্লাহকে চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা করেছে, যাতে লেবানন গাজার প্রতি সমর্থন বন্ধ করে দেয়। মঙ্গলবারের হত্যাকাণ্ডের পর, আমরা সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে বার্তা পেয়েছিলাম যে, এ আক্রমণের লক্ষ্য ছিল গাজার প্রতি আমাদের সমর্থন বন্ধ করা। হিজবুল্লাহ প্রধান দৃঢ়ভাবে বলেন, ইসরাইলের জন্য আমাদের জবাব স্পষ্ট: গাজা, পশ্চিম তীর এবং সেসব পবিত্র ভূমিতে অত্যাচারিত জনগণের প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমর্থন কখনোই বন্ধ হবে না। নাসরাল্লাহ আরও উল্লেখ করেন যে, শত্রুরা মঙ্গলবার এবং বুধবারের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে এবং নেতাদের মধ্যে দুর্বলতা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তবে আমাদের নেতৃত্বের মধ্যে এমন কোনো বিভ্রান্তি বা দুর্বলতা এক মুহূর্তের জন্যও দেখা যায়নি। নাসরাল্লাহর এ ভাষণ লেবাননের জনগণকে আরও দৃঢ়ভাবে হিজবুল্লাহর পাশে থাকার আহ্বান জানায় এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে হিজবুল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও স্থিতিশীলতার প্রতিফলন ঘটায়। সূত্র: মেহের নিউজ