ঈদের পর বড় কর্মসূচি দেবে এনসিপি


ঈদের পর বড় কর্মসূচি দেবে এনসিপি
জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এই দলটি এরই মধ্যে গঠনতন্ত্র ও ইশতেহার প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ এবং সারা দেশে সাংগঠনিক বিস্তারে কাজ শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করবে দলটি। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নিজেদের জানান দেওয়ার পাশাপাশি জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনও শিগগির শুরু হবে।এনসিপি অন্যান্য দলের চেয়ে ব্যতিক্রমী পন্থায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য দল ঘোষণার সময় শীর্ষ পদগুলো বাড়িয়ে নিয়েছেন তারা। সে অনুযায়ী আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, প্রধান সমন্বয়কারী এবং মুখ্য সংগঠকদের অধীনে দল পরিচালনায়ও বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তাতে সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা ও কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করেন নেতারা।সংগঠন সূত্রে জানা যায়, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটির অনুমোদন করবেন সদস্য সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মুখ্য সংগঠক। যে অঞ্চলের জেলা-উপজেলা কমিটি হবে, সেই অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক যুক্ত থাকবেন কমিটি গঠন ও অনুমোদনে। সমন্বয় করবে সমন্বয়কারী প্যানেল।সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সদস্য সচিব এবং সংগঠক প্যানেল সারা দেশে এনসিপি সংগঠন সৃষ্টি ও বিস্তারে কাজ করবে। আহ্বায়কের নেতৃত্বাধীন প্যানেল রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। তা বাস্তবায়নে সব প্যানেলের মধ্যে সমন্বয় করবে সমন্বয়কারী প্যানেল।এনসিপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগাবে এনসিপি। তার জন্য ঈদের পর থেকে নিবন্ধনের মানদণ্ড (ক্রাইটেরিয়া) সামনে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন, কেন্দ্রীয় এবং জেলা কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ অন্য কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে চায় দলটি। আগামী মে মাসের মধ্যে দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতির কথা জানান তারা।রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুসারে, নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য যে কোনো সময়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তবে অতীতে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর পরই নতুন দলের নিবন্ধনের আহ্বান করত ইসি। দলগুলো নিবন্ধনের জন্য ইসির কাছে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্র, লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের তহবিলের উৎস, ব্যাংক হিসাব জমা দিতে হয়।এনসিপির আহ্বায়ক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্রসহ দলের স্লোগান, লোগো, নির্বাচনী প্রতীক ও কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে দলের প্রতীক হিসেবে কলম, বই, বাঘ ও ইলিশ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। দলের জেলা, উপজেলা কমিটি গঠন ও অফিস প্রতিষ্ঠা করে মে মাসের মধ্যেই নিবন্ধনের আবেদন করতে চান তারা।এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের জন্য যে শর্ত রয়েছে, সেভাবেই সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নিবন্ধনের জন্য আমরা জেলাভিত্তিক অফিস এবং কমিটি গঠনের কাজ শুরু করব। ৪০০-এর বেশি উপজেলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কমিটি আছে। সেখান থেকে যারা নাগরিক পার্টিতে যোগ দিতে চান, তাদের রাখা হবে। আমাদের রুটিনওয়ার্ক হিসেবে কাজগুলো চলছে। আশা করি, দ্রুতই সবকিছু চূড়ান্ত হবে।ঈদের পর বড় কর্মসূচি: আত্মপ্রকাশের পর গত মঙ্গলবার প্রথম কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। দলটির নেতারা একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। রায়েরবাজারে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারতও করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পরিচিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী কর্মসূচিগুলো ঠিক করা হবে।এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজান মাসে মূলত সংগঠন গোছানোর কাজ চলবে। ইফতার, স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি ছাড়া বড় কোনো প্রোগ্রাম নেই। ঈদের পর থেকে বড় কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা এবং বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজেদের জানান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ দেশ সংস্কারের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে সারা দেশে করা হবে সভা-সেমিনার। এসব কর্মসূচি থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের আওয়াজ তুলবে এনসিপি।এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা এই মাসে সংগঠন গোছানোর কাজ করছি। স্বাধীনতা দিবস এবং ইফতারকেন্দ্রিক কিছু প্রোগ্রাম হবে। এই মাসে সাংগঠনিক রোডম্যাপ ঠিক করে ঈদের পর থেকে বাস্তবায়নে নামব। আমরা এর চেয়ে বেশি দেরি করতে চাই না। ঈদের পর বিভাগীয় সমাবেশসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচি আমাদের থাকবে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপস্থিত থাকতে পারেন। এর মাধ্যমে আমরা গণজোয়ার সৃষ্টি করব।ঈদের পর নিবন্ধনের শর্ত পূরণে কাজ করার কথা জানিয় তিনি বলেন, আশা করছি, মে মাসের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারব। কেন্দ্রীয় কার্যালয় আমরা কয়েকটা জায়গায় দেখেছি, এখনো দেখছি। শিগগিরই সেটা চূড়ান্ত করব।