কর্মপরিধির বাইরে যাওয়ার অভিযোগ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সরকারি নারী কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে তদন্তের ফলাফল আসার আগেই এ ঘটনাটি র্যাবকে দাঁড় করিয়েছে নানা প্রশ্নের মুখে। মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ তুলে বলছেন, এ নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে র্যাব যা করেছে, তা তাদের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে না। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে র্যাবের কতিপয় সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।
আবার কেউ বলেছেন, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়া এবং জবাবদিহি না থাকায় এমনটি ঘটছে। তবে ব্যক্তির দায় বাহিনীর ওপর চাপানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা দমনে র্যাবের প্রশংসনীয় অনেক ভালো কাজও রয়েছে।
সুলতানা জেসমিনকে আটকের বিষয়টি এলিট ফোর্সের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে কি না-এই প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা
ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব এটা কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে কি পড়ে না। তবে র্যাবের কোনো সদস্য অন্যায় করলে তার সাজা নিশ্চিত। এখানে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। স্পষ্ট কথা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না।’
প্রসঙ্গত, ২২ মার্চ সকালে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে র্যাবের একটি টিম চণ্ডিপুর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) আটক করে। আটকের পর তাকে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে র্যাব-৫ জয়পুরহাটের ক্যাম্পে নেওয়া হয়।
সেখানে অসুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। র্যাব হেফাজতে এ মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষক নূর খান লিটন বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনকে মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। এটিই আইনের বড় ব্যত্যয়। এরপর তাকে মাইক্রোযোগে র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার অসুস্থ হওয়া এবং হাসপাতালে মারা যাওয়ার ঘটনা অনেককিছুর ইঙ্গিত করে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় র্যাবের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা তাদের কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না। যদি নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হয়, বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম ডেভেলপ না করা। তাছাড়া যতক্ষণ জবাবদিহি নিশ্চিত করা না যাবে, ততক্ষণ এ ধরনের বিতর্কের বাইরে র্যাব বের হতে পারবে না। তবে র্যাব অনেক ভালো কাজও করছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সরকার র্যাবকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। এই সুযোগে কোনো কোনো র্যাব সদস্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজস্ব ডিউটির বাইরে অনেক কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র্যাবের কর্মপরিধি নিয়ে হাইকোর্টেরও কোনো গাইডলাইন নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তাহলে র্যাবের কর্মপরিধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।