কিছু মৌলিক সংস্কারের জন্য দলগুলোর ঐকমত্য দরকার
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানো। এজন্য নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসাবে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কার্যকর ও সোচ্চার ভূমিকা দরকার। নির্বাচন যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে পারে সেজন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে কতগুলো আইন পাশ হওয়া দরকার। একই সঙ্গে দরকার রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার আনা।
তারা আরও বলেন, সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। কারণ সংবিধান হলো এক ধরনের সামাজিক চুক্তি। ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন।এতে বক্তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার। দল, সরকার ও সংসদ সর্বত্র একই ব্যক্তি শীর্ষ পদে থাকলে ফের ফ্যাসিবাদের জন্ম নেবে। বিশেষ করে সরকারপ্রধান ও সংসদনেতা একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এতে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা কমে যায়।সুজন’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এমএ মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সুজন’র নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রমুখ। লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান। সঞ্চালনা করেন সুজন’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।ড. আলী রিয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আমরা আশা করি, জুলাইয়ের মধ্যে একটি নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে পারব। যে সনদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা।বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একমাত্র উপাদান নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই জার্মানি ও চেকস্লোভাকিয়ায় স্বৈরাচারী শাসকরা ক্ষমতায় এসেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাক্সক্ষা হলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, যাতে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আর ফিরে না আসতে পারে।ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাক্সক্ষা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানো। নির্বাচন যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে পারে সেজন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে কতগুলো আইন পাশ হওয়া দরকার।যতই সংস্কার করা হোক না কেন, কার্যকরভাবে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুর্নীতি রোধ ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নাগরিকদের সোচ্চার থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। সফর রাজ হোসেন বলেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে যাতে তাদের অপসারণ করা যায় সেজন্য ‘রিকল’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার।গোলটেবিল বৈঠকে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন নাগরিকদের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে-বিপক্ষে মত উঠে আসে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করা জরুরি। দেড় কোটি মানুষকে ভোটের বাইরে রাখা ঠিক হবে না।এতে আপত্তি জানিয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ভোটার হওয়া আর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এক বিষয় নয়। যারা দ্বৈত নাগরিক তাদের অন্য রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকে। অন্য রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পোষণকারী কেউ আমাদের এখানে মন্ত্রী-এমপি হবেন কিভাবে?
