কেন্দ্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বলয় বাড়ছে


চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বলয় বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ওই পরিকল্পনায় রয়েছে আনসার সদস্য বাড়ানোর কথাও। এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের অন্তত ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন মোতায়েনের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আজ অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কার্যপত্রে এ প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। যদিও পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৪ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫-১৬ জন মোতায়েন করা হয়েছিল। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আরও জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজি, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসারের মহাপরিচালক এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ওই বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বার্তা দেওয়া হতে পারে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, আগের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্রে জনবল বাড়বে। তবে কেন্দ্রে কতজন দায়িত্ব পালন করবেন, তা বৈঠকে আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, একই জেলার উপজেলাগুলো একাধিক ধাপে ভাগ করে নির্বাচন করা হচ্ছে। এর ফলে উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বেশি মোতায়েন করতে সমস্যা হবে না। আজ অনুষ্ঠেয় বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর করণীয় নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হবে। এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ পর্যন্ত তিন ধাপে ৪২২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ চতুর্থ ধাপে ৫০টির বেশি উপজেলার তফশিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ছে : ইসি সূত্র জানায়, আজ অনুষ্ঠেয় বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতে পারে। এ বৈঠকে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ জন সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। এই ১৭ জনের মধ্যে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ রয়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে মাত্র একজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। তখন পুলিশ ও আনসার মিলিয়ে ১৪ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোয় ১৮-১৯ জন সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৫-১৬ জন। পার্বত্য, হাওড় ও দ্বীপাঞ্চলের সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও আনসারের ১৮ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯-২০ জন মোতায়েনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে এসব এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে ছিল ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ছিল ১৬-১৭ জন। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ নির্বাচনে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হলে নির্বাচনে ব্যয় বেড়ে যাবে-এমন চিন্তা করছে ইসি সচিবালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের চেয়ে ভোটকেন্দ্রে ১-২ জন পুলিশ কম মোতায়েন চায় ইসি সচিবালয়। আরও জানা যায়, প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে। সেখানে ১১ হাজার ২৬০টি ভোটকেন্দ্র এবং ৭৯ হাজার ৫৯২টি ভোটকক্ষ রয়েছে। আর ভোটার রয়েছেন ৩ কোটি ৬ লাখের বেশি। এসব ভোটারের যাতায়াতের নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, কোস্ট গার্ড ও আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ জন এবং তৃতীয় ধাপে ১১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আজ অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে পর্যালোচনা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিবেদন এ বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারেন। বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।