গাজায় ত্রাণ লুটের অভিযোগে ৪ জনকে হত্যা, যা বলল হামাস


গাজায় ত্রাণ লুটের অভিযোগে ৪ জনকে হত্যা, যা বলল হামাস
গাজায় সম্প্রতি প্রবেশ করতে শুরু করা ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে লুটপাটের অভিযোগে চার ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে হামাস-সংশ্লিষ্ট বাহিনী। এ ঘটনায় দক্ষিণ গাজার এক প্রভাবশালী গোত্রপতির তরফ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ওই চারজনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে সংঘটিত একটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। যে ঘটনায় ত্রাণবাহী ট্রাক রক্ষা করতে গিয়ে ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজার ৬ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।সূত্রটি জানায়, ‘এ চার অপরাধী লুটপাটে জড়িত ছিল এবং ত্রাণ সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর জন্য দায়ী’।নিজেদেরকে ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামী সংগঠন’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ছায়া সংগঠন জানিয়েছে, আরও ৭ জন সন্দেহভাজনের খোঁজ চলছে।আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল গত সপ্তাহে গাজা অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করে। এর ফলে টানা কয়েক মাস পর প্রথমবারের মতো মানবিক ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করে। তবে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণে লুটপাট বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজার লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। আর সেই নিষ্পেষণই মানুষকে ত্রাণ লুটে বাধ্য করছে। তবে ইসরাইল হামাসকেই এই ত্রাণ চুরির জন্য দায়ী করছে, যা রীতিমত ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছে হামাস।ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মতে, হামাসের নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী ত্রাণ সুরক্ষার জন্য নয়, বরং তা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে। যদিও ইসরাইল এই অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।এদিকে বর্তমানে গাজার রাফাহ অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আর ইয়াসের আবু শাবাব নামে সেখানকারই এক প্রভাবশালী গোত্রনেতা হামাসের কর্তৃত্বকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।তিনি দাবি করেন, তার নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দল এখন নির্দিষ্ট এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ পরিচালনা করছে এবং এসব কাজে হামাসের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই।তিনি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে তার দলের কার্যক্রমের ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে তাদেরকে ত্রাণ সহায়তার ট্রাক সুরক্ষায় দেখা গেছে।তবে পাল্টা অভিযোগ করে হামাস বলছে, আবু শাবাব আগে আন্তর্জাতিক ত্রাণ লুট করেছেন এবং দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।হামাসের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু শাবাবকে ‘দখলদার ইসরাইলিদের হাতের পুতুল’ বলে অভিহিত করেছেন। যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।এদিকে আবু শাবাবের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজ থেকে হামাসের এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সেখানে তাকে ‘দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একজন তৃণমূল নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি কিনা ত্রাণ সহায়তার ট্রাক রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন।তবে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) এক মুখপাত্রকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে ত্রাণের ট্রাক রক্ষার জন্য অর্থ দেই না। আমরা কেবল স্থানীয় জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি, বিশ্বাস স্থাপন করি। আর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি, যাতে আরও ত্রাণ আসে এবং বেশি সংখ্যক প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়’।