গাজার ৫০ শতাংশের বেশি অঞ্চল ইসরাইলের দখলে
অনলাইন নিউজ ডেক্স

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি। দেড় বছর অবিরত হামলার পর এদিন থেকে শুরু হয় গাজায় যুদ্ধবিরতি। কিন্তু বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে প্রাণ ফিরতে না ফিরতেই যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ভেঙে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী।তারা শুধু হামলাই বাড়ায়নি, বরং গাজা উপত্যকায় নাটকীয়ভাবে তাদের অবস্থানও প্রসারিত করেছে। এরই মধ্যে উপত্যকাটির ৫০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল দখলে নিয়েছে ইসরাইল। সোমবার এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি।ইসরাইলি সেনা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় সংলগ্ন এলাকা হলো গাজা সীমান্তের আশপাশ। যেখানে সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইলের সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। জানুয়ারিতে যখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয় তখনো অনেকেই উত্তর গাজার বেইত হানুনে তার বাড়িতে ফিরে যান। আবারও ইসরাইল হামলা শুরু করলে সেসব ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আর সেখানে ইসরাইল বাফার জোন তৈরি করে।ইসরাইলি সেনারা নেতজারিম করিডর নামে পরিচিত জমিও দখল করেছে। যা গাজা শহরসহ উত্তরাঞ্চলকে বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। যেখানে ২০ লাখেরও বেশি লোকের আবাসস্থল রয়েছে।পাঁচজন ইসরাইলি সেনা এপিকে জানিয়েছেন, ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি সীমান্তের কাছে ধ্বংস এবং বাফার জোনের পদ্ধতিগত সম্প্রসারণ চলছে।এরই মধ্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল আরেকটি করিডর তৈরি করতে চায়। যা দক্ষিণ গাজার মধ্য দিয়ে রাফাহ শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।এদিকে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইসরাইলে সবচেয়ে বড় রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। রোববার রাতে ইসরাইলের দক্ষিণে ১০টি রকেট ছুড়েছে গোষ্ঠীটি। তবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বেশির ভাগ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করা হয়েছে।রাত ৯টার কিছু পর মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে রকেটগুলো আশকেলন ও আশদোদ উপকূলীয় শহরের দিকে ছোড়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রকেট আশকেলনে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের কাছে আঘাত হানে।এদিকে আইডিএফের বরাত দিয়ে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বাকি রকেটগুলোর মধ্যে অন্তত একটি আশকেলন শহরে আঘাত হানে। যেখানে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে হামাস। ইসরাইল সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলায় চড়া মূল্য দিতে হবে হামাসকে।এদিকে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য বিমানে উঠেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কার্টজকে এই হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, তিনি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। অথচ ১৮ মার্চ থেকেই গাজায় পুনরায় ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। তা এখনো চলছেই। রোববারও গাজাজুড়ে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা।এদিন ভোরে খান ইউনিসে একটি আবাসিক ভবন এবং বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেওয়া একটি তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইল। ফলে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকা লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। একই শহরের জেইতুন এলাকার আইন জালুত স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া একটি তাঁবুতে ইসরাইলি গোলাবর্ষণে এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় আবাসন আল-কাবিরায় আর্টিলারি গোলাবর্ষণে আরও একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। গাজায় পুনরায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের হামলায় ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন। তবে সরকারি মিডিয়া অফিস নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে।
