চব্বিশ বছর ধরে ব্যবসা করতে পারছে না পুস্তক বাঁধাইকারীরা


সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কারণে চব্বিশ বছর ধরে ব্যবসা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ীরা। এনটিআরসিএর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় তাদের অংশ নেওয়ার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাঈমুর রহমান কিরণ। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কচি, কোষাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম তোতা, যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন খান, সাবেক সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত সংগ্রামের সকল শহীদ, আহত ভাই, বোন ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছাত্র জনতার সংগ্রামে আমরাও সহযাত্রী ছিলাম। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিজেরাও নিজ কর্মক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্যের স্বীকার। সিন্ডিকেটের যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে হতে আজ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সারাদেশে যখন স্বৈরাচারের দোসরদের পতন ঘটছে, সেখানে আজও সেই সর্বগ্রাসী সিন্ডিকেট। বহাল তবিয়তে শিক্ষা খাতের এই বিশাল অংশটি কুক্ষিগত করে রেখেছে। শিল্পে আমরা পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে নির্যাতিত অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছি। অথচ ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অবদানও কম নয়। বিগত অবৈধ সরকারের অবৈধ সিন্ডিকেটের কবলে আজ আমরা সব হারাতে বসেছি। তারা বলেন, আমদের এই পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ী সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এবং এফবিসিআই এর ১ম শ্রেণীর সদস্য। বিগত স্বাধীনতা উত্তর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক বোর্ড বই টেন্ডারের মাধ্যমে তালিকাভুক্তি অবস্থায় বই বাঁধাই করে আসছি। শুধু তাই নয় বোর্ড বই সৃজনশীল ও ধর্মীয় বইসহ সকল প্রকার বই আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে বাঁধাই করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৯৯ সালে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আমাদের সংগঠনকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একচেটিয়া সরকারি বই সরবরাহ ব্যাবস্থা কুক্ষিগত করেন। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বেই মুদ্রাকারদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সরকারের নীতিমালায় উল্লেখ থাকে যে, প্রকাশনী বই প্রকাশ করবে। মুদ্রাকার বই মুদ্রণ করবে এবং বাঁধাই কারক বই বাঁধাই করবে। কিন্তু এই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই সিন্ডিকেট একচেটিয়াভাবে সকল কাজ বাগিয়ে নেয়। এত দিন ধরে ওপেন টেন্ডারের কোনো তোয়াক্কা না করে কিছু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজসে কাজ করে আসছে। দীর্ঘদিনের এই অচলাবস্থা নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, পাঠপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেও কোনো সুরাহা পাইনি। অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জাতির সামনে আমাদের ৩ দফা দাবি উপস্থাপন করছি। দফা হলো- বাঁধাই শিল্পে মুদ্রাকারকদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও সিন্ডিকেটের বিলুপ্ত সাধন করতে হবে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ওপেন টেন্ডারের মধ্য দিয়ে পূর্বের মতো সরকারের সঙ্গে সরাসরি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং বাঁধাই কাজের সকল সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাঁধাইকারকদের নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।