চিকিৎসকদের রাজধানীপ্রিয়তা


সারা দেশের চিকিৎসকদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, যেখানে পোস্টিং, সেখানেই তাদের চাকরি করতে হবে। চট্টগ্রামে দুদিনের সফরে গিয়ে চিকিৎসকদের এ কঠোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চান। সবাই যদি ঢাকায় যেতে চান, তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চলবে কীভাবে? শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরপর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা নিতে যেন ঢাকায় আসতে না হয়, সেটি নিয়ে কাজ করব।’ দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি রোধে কঠোর হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী। বস্তুত দেশের গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক থাকা না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যে কোনো চিকিৎসক কর্মজীবনে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জনের পরই রাজধানীতে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চান। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, গ্রামীণ এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ৯৬ শতাংশ চিকিৎসক নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। একই গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে-এমন চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে বেশি অনুপস্থিত থাকেন। ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকরা গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন, তার অন্যতম কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ। অনেকে বলেছেন, গ্রামীণ এলাকায় কাজ করতে গেলে গালমন্দ শুনতে হয়। চিকিৎসকদের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা দরকার এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা না পেয়ে মানুষ বিকল্প চিন্তা করে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা রাজধানীতে গিয়ে চিকৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তারা ঝুঁকছেন ঝাড়ফুঁকের দিকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের স্বাস্থ্যখাত মুখ থুবড়ে পড়বে। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানেই যাতে তারা দায়িত্ব পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আলোচিত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। কাজেই এ সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে কোনোরকম দুর্নীতি হয় কিনা, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। অন্যান্য খাতেও একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সরকারি চাকরিজীবীদের রাজধানীমুখী দৌড় এবং এই নগরীতে বসবাসের মোহ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে।