চিফ অফিসার আতিকুল্লাহর বাসায় কান্নার রোল


ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের বাসায় চলছে কান্নার রোল। তার মা এবং সন্তানসম্ভবা স্ত্রীসহ স্বজনদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাবার ছবি হাতে দুই মেয়ে তার ফেরার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন মা। আতিকুল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলায় হলেও বাসা চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকাননের রথেরপুকুর পাড় এলাকায়। বুধবার বেলা ১১টায় আতিকুল্লাহ খানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পবিবারের সবাই বিমর্ষ। কাঁদছেন তার মা। নীরবে চোখের পানি ফেলছেন তার স্ত্রীও। আশপাশের লোকজন বাসায় এসে ভিড় করেছেন। স্বজনদের স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আতিকুল্লাহর মা শাহনূর আক্তার কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। অবোধ তিন কন্যা শিশুও হতবিহ্বল, সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। আতিকুল্লাহর ছোট ভাই আবদুন নূর আসিফ জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে পরিচিত এক দুলাভাইয়ের মাধ্যমে তিনি তার ভাই জিম্মি হওয়ার খবর পান। তিনিও জাহাজে চাকরি করেন। তিনি বলেন, খবর পাওয়ার পর আমি দুলাভাইয়ের অফিসে ছুটে যাই। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারি। এরপর ভাইয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ পরপরই হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করি। আবদুন নূর আসিফ আরও বলেন, ভাই বলছেন, যদি বেঁচে ফিরি দেখা হবে। সবাইকে দোয়া করতে বলিস। যাতে অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারি। এ সময় তিনি তার দুই মেয়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন। নামাজ পড়ে সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন। আতিকুল্লাহর বাবা বেঁচে নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যেই আতিকুল্লাহ বড়। মা, ভাই, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়। ২০১৭ সালে আতিকের বাবা মারা যান। এরপর তিনিই সংসারের হাল ধরেন। ছোট ভাই এখনও পড়াশোনা করছেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ইয়াশা ফাতিমা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মেঝ মেয়ে উমাইজা মাহাবিন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে খাদিজা মাহাবিনের বয়স মাত্র দুই বছর। আতিক ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসআর শিপিংয়ে কর্মরত ছিলেন। পরে আরেকটি বিদেশি জাহাজে যোগ দেন। কিন্তু এরপর আবারও ২৫ নভেম্বর তিনি এসআর শিপিং এর ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে যোগ দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ হোয়াটসঅ্যাপে সর্বশেষ একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান তার ভাইয়ের কাছে। এতে তিনি বলেন, আসিফ আমরা ঠিক আছি, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। এখন মোবাইল নিয়ে ফেলবে। আমরা সোমালিয়ার দিকে যাচ্ছি। আড়াই দিন পর পৌঁছাব। দোয়া করো সবাই। আতিকুল্লাহ খানের মা শাহনূর আক্তারের কাছে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। বলেন, আমার বলার মতো এখন আর কিছুই নেই। আমি আমার ছেলেটাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তার তিনটি ছোট ছোট মেয়ে। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। শোনার পর থেকে তার স্ত্রী শুধু কাঁদছে। তার প্রেশার বেড়ে গেছে। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। নাতনিরা পাঁচ মিনিট পর পর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। পরিবারের সবাই অসুস্থ পড়ে পড়েছে। সেহরিতে কোনো মতে খেয়ে রোজা রেখেছি। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি।