তীব্র দাবদাহে বাড়ছে হিট স্ট্রোক শিক্ষকসহ ১২ জনের মৃত্যু


টানা তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ দেশবাসী। রোববার প্রচণ্ড গরমে রাজধানী ঢাকাসহ আট জেলায় হিট স্ট্রোকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একজন শিক্ষকও আছেন। গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালগুলোয় গরমজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা বেশি থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। অল্পতেই মানুষ প্রচণ্ড ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এরকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকাসহ পাঁচ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলো হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এসব এলাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চাইলে খোলা রাখতে পারবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার এক বিবৃতিতে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু প্রাথমিকের সব ক্লাস মর্নিং শিফটে হয়, তাই সারা দেশে প্রাথমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার যশোর ও রাজশাহী জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। যশোরে সর্বোচ্চ ৪২.২ এবং রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ খুলনা অঞ্চলের ১৫ জেলার ওপর দিয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি তাপমাত্রা বয়ে যায়। বাকি জেলাগুলোয় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ ছিল। আরও তিনদিন দেশে তীব্র গরম থাকবে জানিয়ে রোববার আবারও ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ নিয়ে পঞ্চমবার হিট অ্যালার্ট জারি করা হলো। ১৬ এপ্রিল থেকে টানা তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে। তবে তাপমাত্রা নিয়ে কিছুটা স্বস্তির তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি সপ্তাহের শেষদিকে বৃষ্টির আভাস রয়েছে। ২ মে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ৩ মে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। ৮ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ১-৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়েছে। তাপমাত্রার পাশাপাশি জলীয় বাষ্পের আধিক্য রয়েছে। আবহাওয়াবিদ একে নাজমুল হক বলেন, একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য। এ কারণে মানুষের শরীরে প্রচুর ঘাম হচ্ছে। আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীরের ঘাম সহজেই শুকাচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে রাস্তায় মানুষের যাতায়াত কমে গেছে। গরমে অল্পতেই মানুষ হাঁপিয়ে উঠছেন। রাস্তার পাশে ফুটপাতে আখের রস, শরবত, লেবুপানি খাওয়ার হিড়িক পড়েছে। রোববার গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় অতিরিক্ত গরমে বজলুর রহমান (৫০) নামের একজন মারা গেছেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে ইমাদ কাউন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বজলুর কমিউনিটি পুলিশ সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশের ধারণা, অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হতে পারে। মৃত বজলুর সদরঘাট এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা সহকর্মী কমিউনিটি পুলিশ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, বিকালে ডিউটি করার সময় অতিরিক্ত গরমে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে অচেতন হয়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বজলুর রহমান ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতিতে কমিউনিটি পুলিশ সদস্য হিসাবে কাজ করতেন বলে তিনি জানিয়েছেন। বংশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ জালাল বলেন, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছি। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। অপরদিকে গুলিস্তানে অটোরিকশার ভেতরে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে সেলিম মিয়া (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে অটোরিকশায় করে কাজলা থেকে কাওরান বাজার যাওয়ার পথে গুলিস্তানে এ ঘটনা ঘটে। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন চিকিৎসক ও স্বজনরা। এছাড়া রাজধানীর গুলিস্তানে পীর ইয়ামেনী মার্কেটের মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় মিজানুর রহমান (৬০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। আসরের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি কুমিল্লার বরুড়ার আনাইসকোটা গ্রামের মৃত আব্দুল গনি মুন্সির ছেলে। মিজানুর রহমান আগে সিলেটে পাথরের ব্যবসা করলেও এখন কিছু করতেন না। তার পরিবার গ্রামে থাকলেও তিনি পুরানা পল্টন থাকতেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বোন জামাই আব্দুল মালেক জানান, আসরের নামাজের আগে মিজানুর রহমান খারাপ লাগছে বলে জানান। পরে নামাজরত অবস্থায়ই তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। তাৎক্ষণিক তাকে সেখান উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে তিনি মারা যেতে পারেন বলে তারা ধারণা করছেন। নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণে সুলতান উদ্দিন মিয়া (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। রোববার বেলা ৩টার দিকে তার মুত্যু হয়। তিনি নরসিংদী কোর্টে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) হিসাবে কর্মরত ছিলেন। স্বজনরা জানান, সুলতান উদ্দিন মিয়া প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে বের হয়ে নরসিংদী কোর্টে যান। কোর্টে কাজ করার সময় দুপুরে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে তিনি আদালতের মসজিদের সামনে এলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এমএন মিজানুর রহমান বলেন, রোগীটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা মুশকিল। তবে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, তার বুকে ব্যথা ছিল। এর ওপর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করছিলেন। ফুলবাড়ীতে একই দিনে দুজনের মৃত্যু : ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় রোববার তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন নাজিম উদ্দিন (৭০) ও ঈশ্বর চন্দ্র (৬০)। কড়াই গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন দুপুর ১টার দিকে জমি থেকে ঘাস কেটে বাসায় আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। অপরদিকে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার রাজবংশীপাড়ার ঈশ্বর চন্দ্র মনিমালা সিনেমা হল এলাকায় তার ভাড়া নেওয়া ধানের চাতালে কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাতালের অন্য কর্মীরা তাকে বাসায় নিয়ে এলে গ্রামের একজন ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এলাকাবাসীসহ একাধিক সূত্র হিট স্ট্রোকে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। যশোরে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু : যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরে ধান কেটে বাড়ি আসার পর আহসান হাবিব (৩৭) নামে এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার এ ঘটনা ঘটে। তিনি যশোর সদরের আমদাবাদ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। স্থানীয়রা বলছেন, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বলেছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া তার মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম বলেন, আহসান হাবিব সকালে মাঠে ধান কেটে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসেই সকাল পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা এবং শরীর জ্বলে যাচ্ছে বলে কাতরাতে থাকেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমাদের ধারণা, প্রচণ্ড তাপের কারণে হিট স্ট্রোকে তিনি মারা গেছেন। কালকিনিতে কাজে বেরিয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের কালকিনিতে তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক করে শাহাদাত সরদার (৫৯) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শাহাদাত পৌর এলাকার পশ্চিম শিকার মঙ্গলগ্রামের ছালাম সরদারের ছেলে। এলাকা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী শাহাদাত সরদার রোববার সকালে তীব্র গরমের মধ্যে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তিনি গরম সইতে না পেরে হঠাং অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে কালকিনি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। নিহতের চাচাতো ভাই জালাল সরদার বলেন, শাহাদাত সরদার গরম সহ্য করতে না পেরে হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন। সুবর্ণচরে ২য় শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু : সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, সুবর্ণচরে হিট স্ট্রোকে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে নিজ বাড়িতে নিহত মো. কামরুল হাসান ফাহিম (৭) চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেরামতপুর গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে। সে স্থানীয় মধ্য কেরামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্র ছিল। বিকালে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মধ্য কেরামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেকান্তর আলম বলেন, ফাহিম সকালে বিদ্যালয়ে আসে। আমাদের বিদ্যালয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ থাকায় ক্লাস হয়নি। পরে সে বাড়িতে গিয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে রোদের মধ্যে খেলাধুলা করার সময় অচেতন হয়ে পড়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। গোপালপুরে চা বিক্রেতার মৃত্যু : গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ফেরদৌস আলম ঠান্ডু (৫০) নামে এক চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে বেলুয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি হেমনগর ইউনিয়নে বেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোনতাজ মাস্টারের বড় ছেলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল করিম জানান, নিহত ঠান্ডু বেলুয়া বাজারে নিজ দোকানে প্রতিদিনের মতো সকাল থেকে চা বিক্রি করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে বাজার থেকে দুধ কিনে বাড়ি যান। প্রচণ্ড গরমে তীব্র দাবদাহে বাড়িতে গিয়েই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে মারা যান। রাজশাহীতে হিট স্ট্রোকে এক যুবকের মৃত্যু : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে দিলীপ বিশ্বাস (৩৫) নামের এক যুবক হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার সকাল ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি পবা উপজেলার দামকুড়া থানার কাদিপুর গ্রামের গোপাল বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ বিশ্বাস সুস্থস্বাভাবিক মানুষ ছিলেন। হঠাৎ করেই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মারা গেছেন। স্থানীয়দের ধারণা, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক করেই তিনি মারা গেছেন। তবে দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল বাশার বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত দিলীপ বিশ্বাসের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, স্ট্রোক করেই তিনি মারা গেছেন। তবে সকালে হিট স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার মতো তাপমাত্রা ছিল না। তাই আমাদের ধারণা, হিট স্ট্রোক নয়, স্ট্রোক করেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, রোববার দুপুর ১২টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাকেরগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে মৃত্যু : বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, বরিশালের বাকেরগঞ্জে হিট স্ট্রোকে রিয়াজ হাওলাদার নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা মারা গেছেন। শনিবার বিকালে কলসকাঠি বাজারে উপজেলা নির্বাচনে এক প্রার্থী পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় অসুস্থ হয়ে হিট স্ট্রোকে তিনি মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। রিয়াজ হাওলাদার কলসকাঠী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একই এলাকার মজিবর হাওলাদারের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানপ্রার্থী রাজিব তালুকদারের পক্ষে তার মা সাবেক সংসদ-সদস্য পারভিন তালুকদারের সঙ্গে কাপ-পিরিচ মার্কায় গণসংযোগ চালিয়ে ফেরার পথে রিয়াজ হাওলাদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক রিয়াজকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুনায়েম সাদ জানান, ধারণা করা যায় অতিরিক্ত গরমে রিয়াজ হাওলাদার হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। দাবদাহে আগুনে পোড়া রোগীদের হাঁসফাঁস অবস্থা : গরমের তীব্রতায় হাঁসফাঁস করছেন বিভিন্নভাবে পোড়া রোগীরা। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রোববার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগীদের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, গরমে পোড়া রোগীদের শরীর থেকে নির্গত ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। চলমান গরমে রোগীদের কষ্ট হচ্ছে। তবে স্যালাইন দিয়ে পোড়া রোগীদের ফ্লুইডের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বার্ন ইউনিট হাসপাতালের একাধিক নার্স বলেন, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নেই। আসনের তুলনায় পর্যাপ্ত ফ্যান নেই। কয়েকটি ওয়ার্ডে ফ্যান নষ্ট। রোগীরা নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট ফ্যান কিনে ব্যবহার করছেন। কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহে বাতাসও যেন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।