‘দুর্নীতির বরপুত্র’ সারওয়ার কানাডা পালিয়েছেন


কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই ‘দুর্নীতির বরপুত্র’খ্যাত গোলাম সারওয়ার সপরিবারে কানাডায় পালিয়েছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে এক ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রীসহ কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। স্থানীয়দের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বড় ভাই মুস্তফা কামালের প্রভাবে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেন সারওয়ার। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, নিয়োগ, বদলি, নির্বাচনে জালিয়াতি, লালমাই পাহাড় দখল, পদ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের হোতা ছিলেন তিনি। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি গোলাম সারওয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, গোলাম সারওয়ার টানা ১৫ বছর বিনা ভোটে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বড় ভাই মুস্তফা কামাল রাষ্ট্রীয় কাজে ঢাকায় থাকতেন। এ সুযোগে ছোট ভাই সারওয়ার গোটা এলাকার দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে শোষণ করতেন। দিনে দিনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত মাফিয়া ডনে পরিণত হন তিনি। তার ক্ষমতার অপব্যবহারে গোটা সদর দক্ষিণ এলাকার মানুষ ছিল চরম অতিষ্ঠ। স্থানীয়রা জানান, সব সেক্টরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সালিশ-দরবার, লালমাই পাহাড়ের মাটি লুট; বিনা ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বাচিত করা; সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সভাপতি ও সদস্য নিয়োগ; বাজার কমিটি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের সব অঙ্গ-সংগঠনের পদপদবি বিক্রি; টিআর, কাবিখার অর্থ লুটপাট; বিভিন্ন বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়সহ সব সেক্টরে দুর্নীতি ও লুটপাট করে ১৫ বছরে সারওয়ার সহস্র কোটি টাকা কামিয়েছেন। তিনি কানাডায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। বিভিন্ন দেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন। সারওয়ার বর্তমানে কানাডায় আত্মগোপনে রয়েছেন। সরকার পতনের কয়েকদিন আগে ছেলে সাইফ, মেয়ে সামরিন, স্ত্রীসহ কানাডায় চলে যান। তার পারিবারিক সূত্র কানাডায় চলে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে সারওয়ারের বিরুদ্ধে। লালমাই পাহাড়ে ৭০ বিঘা জমি, কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, ঢাকার গুলশানে একাধিক ফ্ল্যাট এবং একটি বাড়ি রয়েছে তার। সূত্র জানায়, দেশের চেয়ে বিদেশে বেশি সম্পত্তি করেছে এই পরিবার। বেশির ভাগ টাকা তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল মজুমদার বলেন, আমরা গোলাম সারওয়ারের কাছে জিম্মি ছিলাম। এখানে প্রশাসনের কোনো ক্ষমতা ছিল না। সারওয়ার যেটা বলতেন, সেটাই আইন। তার কথাই ছিল সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট, লালমাইয়ে শেষ কথা। সব সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে টাকার পাহাড় তৈরি করেছেন তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, দলের পদপদবি বিক্রি, নিয়োগ বণিজ্য করে সারওয়ার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। ভাই অর্থমন্ত্রী থাকায় তার প্রভাবে তিনি আরও বেশি ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন। বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন। তাকে দেশে এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল হাজারী বলেন, গোলাম সারওয়ার ছিলেন এই এলাকার দুর্নীতির বরপুত্র। সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের ক্ষমতার পুরো প্রভাবটাই তিনি দেখিয়েছেন। মুস্তফা কামাল কারচুপির ভোটে নির্বাচিত হয়ে বছরে একদিনও এলাকায় আসতেন না। সারওয়ার সব লুটেপুটে খেয়েছেন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে সপরিবারে কানাডা চলে গেছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গোলাম সারওয়ারকে কল করা হলেও বিদেশে অবস্থান করায় তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।