দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না: তারেক রহমান


দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমানে দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। এক, বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবেদার রাষ্ট্র পরিণত করতে না পারে। এবং দুই- গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক তাবেদার অপশক্তি আর যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এ দুটি বিষয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়।বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগনের এ দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, যারা বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ বা সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার ও রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুণ-অপহরণ, দুর্নীতি-লুটপাট ও টাকা পাচারকারী বর্বর বন্দিশালা আয়না ঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ।শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে (ভার্চুয়ালি) তিনি এসব কথা বলেন।তারেক রহমান বলেন, শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের অভিপ্রায় জানিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির অবস্থান বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছে, জানিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জনসম্মুখে এবং সরকারের কাছে বিএনপি সুস্পষ্টভাবে মতামত তুলে ধরেছে। কারণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জবাবদিহিমূলক গণতাান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখে চায়। বিএনপি এই সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে যাতে জনগণের সামনে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকে, এ কারণেই কিন্তু বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা, পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে, তাহলে জনমনে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে না।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সব ধর্মের, সব মতের মানুষ আমরা যাতে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, এজন্যই রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক রীতি পদ্ধতির চর্চা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কারণ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ স্ব-অবস্থান যদি নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে একটি নিরাপদ মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। অতএব গণতান্ত্রিক বিশ্বের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রবিরোধী যারা তারা অপশক্তি হিসেবে কিন্তু চিহ্নিত। মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গত দেড় দশক ধরে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে যে দলটি দেশ ও জনগণ এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, গণতন্ত্রকামী জনগণ এরই ভেতরে তাদেরকে অপশক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছে।গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্যে করে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চলমান যাত্রায় গণমাধ্যমে ভূমিকা কিন্তু অনস্বীকার্য। গণমাধ্যমে দেশ-বিদেশের প্রতিদিনের চালচিত্র দৃশ্যমান। সারা পৃথিবীর কখন কোথায় কি ঘটছে মুহুর্তেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, জানতে পারছি। তবে চলমান ঘটনাবলীর পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শাসনের যে দুষ্ককর্মগুলো প্রতিনিয়িত গণমাধ্যমে প্রচার এবং জনপরিসরে আলোচনার রাখা দরকার। গত ১৫ বছর যা হয়েছে, জুলাই-আগষ্টে যা হয়েছে-এগুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের সামনে প্রতিনিয়ত আলোচনায় রাখা দরকার। ফ্যাসিবাদী শাসনকালের বর্বরতার যে চিত্র যদি আমরা প্রতিনিয়ত স্মরণ রাখতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন দেশের কার্যকর গণতন্ত্র উত্তরণের পথ যেমন সুগম করবে, ঠিক একইভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেউ বিবেধ বা বিরোধ উস্কে দিতে সক্ষম হবে না।এ প্রসঙ্গে ফ্যাসিবাদ শাসনের সময়কালে একটি বিষয় সম্পর্কে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিশ্চয় সবার মনে আছে ফ্যাসিবাদ শাসনের দীর্ঘ দেড় দশকে বিভিন্ন সময় দেশে জঙ্গি নাটক কিংবা ধর্মীয়ভাবে যাদেরকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠি বলা হয় তাদের ওপর সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার তাদের ফ্যাসিবাদী শাসন, তাদের লুটপাট থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে রাখতে চেয়েছিল। ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল তারা। সেই পলাতক স্বৈরাচার তাদের নিজেদের হীন দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে দাবার গোটি হিসাবে ব্যবহার করেছে। সেই সময়ে আমরা দেখেছি গুম-খুণ-অপহরণের ভয়ে অনেকে এ বিষয়ে মুখ খোলার সাহসও করেননি।তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার কি কারণে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে ঘিরে দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করত এটি বর্তমানে গণমাধ্যমের জন্য একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আগামী দিনে রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের জন্যও কিন্তু সহায়ক হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ফ্যাসিবাদের গত দেড় দশকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাছিমনগর, রংপুর, গাইবান্ধা কিংবা সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বাড়ি-ঘর কিংবা উপসনালয় ঘিরে বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল, তাদের কি উদ্দেশ্যে ছিল বর্তমানে এসব নিয়ে গণমাধ্যমে যদি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে নিয়ে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের সাহস করবে না।ঘটনা তদন্তের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর-অনাহত ঘটনা ঘটেছে, তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করবে। এজন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা যারা শহিদ জিয়া কিংবা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজনীতি করি, আদর্শের রাজনীতি করি সেই বিএনপি বিশ্বাস করে-যেই রাষ্ট্র ও সমাজে নারী, শিশু এবং বিভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠির মানুষ নিরাপদ নয় কিংবা নিরাপদবোধ করে না, সেটি আর যাই হোক কোনো সভ্য রাষ্ট্র হতে পারে না।বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আব্দুল মালেক, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।আরও বক্তব্য দেন-মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, অ্যাডভোকেট নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুভাষ চন্দ্রা চাকমা।