নতুন ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শনিবার
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর এবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে একই নামের মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ গড়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে করা মামলায় ডিভিশন বেঞ্চ কোনো হস্তক্ষেপ না করায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে এখন কোনো আইনি বাধা নেই। বরং রাজ্যকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গভর্নর সি ভি আনন্দ বোস এর আগে বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হুমায়ুন কবীর বর্তমানে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। তার এই ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের এ অনুষ্ঠান শুরু হবে। হুমায়ুন কবীরের এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্যোগকে বিভিন্ন মহল থেকে সংখ্যালঘু আবেগের সঙ্গে রাজনৈতিক খেলা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর বলেন, শনিবার রেজিনগরে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেবেন। এই মসজিদ তৈরি করতে তিন বছর সময় লাগবে। অর্থ জোগাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। একই সঙ্গে তিনি এ অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে নিরাপত্তাজনিত অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হুমায়ুন কবীর দাবি করেছেন, তার নিজস্ব প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন।
জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে দাবি করে হুমায়ুন বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। লাখ তিনেক লোক তো কাল হবেই।’
জানা গেছে, মরাদিঘি এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ৪০ হাজার অতিথির জন্য শাহি বিরিয়ানি প্রস্তুত করছে সাত ক্যাটারার। স্থানীয় আরও ২০ হাজার মানুষের জন্য আলাদা বিরিয়ানির ব্যবস্থা আছে। খাদ্য খাতে ব্যয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ১৫০ ফুট লম্বা ও ৮০ ফুট চওড়া মঞ্চ তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। অনুষ্ঠানে ৪০০ বিশেষ অতিথি বসবেন। ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ভিড় ও যান নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকবেন। হুমায়ুন কবিরের দাবি, প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ৩ লাখ মানুষ জমায়েত হবে।
এদিকে এই মসজিদ নির্মাণ ঘিরে এই রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। বিজেপি বলেছে, তৃণমূল বিধায়ক মসজিদ নির্মাণের নামে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের ভাষ্যমতে, সংখ্যালঘুদের আবেগ নিয়ে হুমায়ুন কবীর ছিনিমিনি খেলছে। মানুষ হুমায়ুনের কথায় পাত্তা দেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উন্মোচন করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন।
হুমায়ুন কবীর আরও ঘোষণা দেন, ২২ ডিসেম্বর বহরমপুরে আয়োজিত একটি গণসমাবেশ থেকে তিনি একটি নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন। এই নতুন দল নিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হবেন বলে জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহরমপুরের সভার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়, হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিধায়ক। সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান এবং জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভিত্তিপ্রস্তর তিনি করবেনই। মসজিদের জমিও চিহ্নিত।
