প্রতিরাতে শতাধিক ট্রাক বালু লুট, সশস্ত্র মহড়া
অনলাইন নিউজ ডেক্স

উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজশাহীতে পদ্মার শ্যামপুর বালুমহাল ইজারার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। ফলে জেলা প্রশাসন ইজারা দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়নি। পাশাপাশি বালুঘাট এলাকায় সতর্কীকরণ লাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। কেউ বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু একটি অসাধু চক্র কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বালু লুট করছে। তারা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ছুড়ে ফেলেছে। চক্রটি পদ্মা থেকে প্রতিরাতে শতাধিক ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে বালু লুটের সময় সশস্ত্র মহড়া দেয় চক্রের লোকজন। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার জানান, শ্যামপুর বালুমহাল থেকে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ প্রশাসন পেয়েছে। এ বিষয়ে বালুচোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উচ্চ আদালতে করা রিট নিষ্পত্তি না হওয়ায় বালু উত্তোলন বন্ধ থাকবে।জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীর কয়েকটি বালুমহাল ইজারার নোটিশ জারি করে জেলা প্রশাসন। ১৮ মার্চ আগ্রহী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে পদ্মার শ্যামপুর বালুঘাটের জন্য ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দর দেন সাইফ ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এদিকে ইজারা প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় ১৭ মার্চ বরেন্দ্র অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাহফুজা মোর্শেদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্যামপুরসহ রাজশাহীর সব বালুমহালে ছয় মাসের জন্য বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশের পর জেলা প্রশাসন ইজারার সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। পাশাপাশি বালুমহাল এলাকায় সতর্কীকরণ নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সিন্ডিকেটের স্থানীয় দুই হোতা শাহীনুর ইসলাম সিহাব ও রমজান আলী ১ জুন রাতে জেলা প্রশাসনের সতর্কীকরণ রেড নোটিশ অপসারণ করে। এরপর তারা ৬টি বার্জ নদীতে নামিয়ে পদ্মার ভেতর থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। অভিযোগ পেয়ে পবা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করেন। কিন্তু অসাধু চক্রটি অভিযান শেষ হওয়ার পরপর ওই রাতেই আবারও বালু উত্তোলন শুরু করে। একইভাবে তারা ২ জুন রাতেও বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করে দিনে প্রকাশ্যে বিক্রি করে। চক্রটি বালু উত্তোলন করে ৩ জুন রাতেও।স্থানীয়রা আরও জানান, সন্ধ্যার পরপরই চক্রের সশস্ত্র ক্যাডাররা কাটাখালী থেকে পদ্মার তীরবর্তী মোক্তারের মোড় পর্যন্ত মহড়া দেয়। যাতে এলাকাবাসী তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে না পারে। রাতভর তারা শতাধিক ট্রাক বালু উত্তোলন করে। এদিকে এলাকায় সশস্ত্র ক্যাডারদের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে বিজিবি ক্যাম্প, পুলিশ ফাঁড়ি ও কাটাখালী থানা থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগের বিষয়ে শাহীনুর ইসলাম শিহাব বলেন, শ্যামপুর বালুমহালের জন্য আমরা সর্বোচ্চ দরদাতা। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে জেলা প্রশাসন আমাদের কার্যাদেশ দেয়নি। গত দুই মাসে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে বালু উত্তোলন করছি। কার্যাদেশ ছাড়া বালু উত্তোলন বেআইনি কিনা জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব দেননি।রিটকারী মাহফুজা মোর্শেদ জানিয়েছেন, তিনি শ্যামপুর বালুঘাটের সাবেক এই ইজারাদার। ২০০৭ সালে পদ্মা নদী থেকে রাজস্ব দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আদালত তার প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের জন্য আদেশ দিলে ২০১৩ সালে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দেন। তাকে ২০ লাখ ঘনফুট বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রশাসন তাকে বালুমহাল বুঝিয়ে না দিয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেন। এই সুযোগে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পদ্মার বিভিন্ন বালুমহাল থেকে অবাধে বালু লুট করে। অভিযোগ করার পরও ওই সময় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারকে রাজস্ব পরিশোধ করলেও বরেন্দ্র অ্যাসোসিয়েটস একদিনের জন্যও বালু উত্তোলনের সুযোগ পায়নি। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর অক্টোবরে বরেন্দ্র অ্যাসোসিয়েটস উচ্চ আদালতে রিট করে রাজশাহীর সব বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধসহ ২০০৭ সালে দেওয়া উচ্চ আদালতের আদেশ কার্যকরের আবেদন করেন। ১৭ মার্চ উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ বরেন্দ্র অ্যাসোসিয়েটসকে বালুমহাল বুঝিয়ে দিয়ে সব ইজারা ব্যবস্থা স্থগিত ও বালু উত্তোলন বন্ধের আদেশ দেন।এ বিষয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া পশ্চিম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আমরা উচ্চ আদালতের সর্বশেষ আদেশ নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি আমাদের বালুমহাল বুঝিয়ে দিতে। কারণ আমরা রাজস্ব পরিশোধ করেছি কিন্তু বালু উত্তোলন করতে পারিনি সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
