প্রধান উপদেষ্টার ৪ দিনের চীন সফর শুরু আজ


প্রধান উপদেষ্টার ৪ দিনের চীন সফর শুরু আজ
আজ চারদিনের সফরে চীন যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তার এ সফর। ধারণা করা হচ্ছে, এ সফরের ফলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হওয়াটাই একে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। প্রধান উপদেষ্টার সফরটি ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ উপলক্ষ্যে এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২৬ থেকে ২৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল চীনে সরকারি সফর করবে। প্রধান উপদেষ্টা চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় ২০২৫ সালের দ্য বোরো ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে ২৭ মার্চ পেনিং প্ল্যানারিতে অংশগ্রহণ করবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোববার গণমাধ্যমকে জানান, এ সফরে কোনো চুক্তি সই হচ্ছে না। তবে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সীমাবদ্ধতার কারণে বড় চুক্তির মতো কোনো পদক্ষেপ না আসাই স্বাভাবিক। তবে এ সরকারের সময়ে হওয়া সমঝোতা কিংবা প্রাথমিক উদ্যোগকে পরবর্তী সরকারগুলোর এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি হবে। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে প্রত্যাশা ও বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের সঙ্গে জনগণের পরিসরে যে সহযোগিতা, তা বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাস্থ্য অন্যতম।’গত বছরের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গিয়েছিলেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দুই সফরের তুলনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু চীন। সেই বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ ধারণ করে। চীনের দিক থেকে একই ধরনের সেন্টিমেন্ট (ভাবাবেগ) আছে। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম সফর হিসাবে চীনকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে।এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এজেন্ডাভিত্তিক নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। তবে আমাদের ও চীনের দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ আছে। সেই পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তার প্রকল্প নিয়ে কথা বলারও একটা সুযোগ আছে।’রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিষয়ে চীনের একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অবস্থানটা তাদের জানাতে পারি। দুই পক্ষের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি, প্রত্যাবাসনের জন্য তা নিয়ে আলোচনা হবে।’স্বাস্থ্য খাতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরের পর দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেশ বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দলটি চীনের কুনমিংয়ে গেছে। তারা চীনের স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট। কুনমিংয়ে চারটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য নির্বাচিত করেছে। স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার আরও দু-একটি দিক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশে চীনের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা। এ বিষয়ে জোর দিতে শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ সফরে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ে সহায়তা, গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহায়তা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে কতগুলো ঘোষণা আসতে পারে, তার মধ্যে থাকতে পারে ঋণ ঘোষণা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংক্রান্ত ঘোষণা, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়। ২৮ মার্চ সকালে চীনের গ্রেট হলে প্রধান উপদেষ্টা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহায়তা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।