ফিক্সিং নিয়ে ‘অ্যাক্টিং’, মিরপুরের মঞ্চে হাসির নাটক


ফিক্সিং নিয়ে ‘অ্যাক্টিং’, মিরপুরের মঞ্চে হাসির নাটক
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ম্যাচ নিয়ে আগেরদিন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিসিবি পরদিন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির কার্যক্রম হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। উঠেছে প্রশ্ন, এটা কি কমেডিয়ানদের অভিনয়! ফিক্সিংয়ের তদন্ত যে এভাবে হয় এটা দেখে সবাই অবাক। সাধারণ ফিক্সিংয়ের কোনো ব্যাপারেই তদন্ত কমিটির জনসমক্ষে কিছু করার নিয়ম নেই। অথচ আগেরদিন শাইনপুকুরের যে দুই ব্যাটার স্টাম্পিং আউট হয়েছিলেন এবং গুলশান ক্লাবের যে উইকেটকিপার ছিলেন তাদের মিরপুর একাডেমিতে হাজির করে তদন্ত কমিটি। এরপর অভিনয় করানো হয় আগের দিনের মতো।শাইনপুকুরের মিনহাজুল আবেদীন ও রহিম আহমেদ, গুলশানের আলিফ হাসান আগেরদিন কী হয়েছিল, সেটা আবার অভিনয় করে দেখান। কয়েক ধাপে ঠিক আগেরদিন যেভাবে আউট হয়েছিলেন, সেটা করে দেখালেন তারা। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান রাইয়ান আজাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেটা ভিডিও করেছেন অন্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে ট্রল শুরু হয়েছে। আগের দিনের ঘটনার সব ফুটেজ রয়েছে সবার কাছে। সেখান থেকেই দেখে তদন্ত করা উচিত। আসল জিনিস বাদ দিয়ে তারা অভিনয় দেখে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন! ফিক্সিংয়ের মতো ঘটনায় এমন অভিনয় করিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার মানে খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। রাইয়ান আজাদ যদিও নিজের পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন।বুুধবার মিরপুরে গুলশান ও শাইনপুকুরের ম্যাচে একটি দৃষ্টিকটু আউট প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাদা চোখেই দৃশ্যমান হয়েছে-এটি ফিক্সিং। অগ্রণী ব্যাংকের কোচ রাজিন সালেহ জানিয়েছেন অভিনয়েও তারা এত কাঁচা! মিডিয়ায় ঘটনাটি ছড়িয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নড়েচড়ে বসেছে। আগেরদিন আউট হওয়া দুই ব্যাটারকে নিয়ে কাল বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিট তদন্তে নেমেছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘এই বিষয়ে এরই-মধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় এনে তদন্ত করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ প্রিমিয়ার লিগের টেকনিক্যাল কমিটি ও বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ (অ্যান্টি করাপশন ইউনিট) পুরো ঘটনার তদন্ত করবে। সাবেক বাঁ-হাতি স্পিনার ও বিসিবির আম্পায়ারদের কোচ এনামুল হক মনি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। অপর দুই সদস্য হলেন-সাবেক ক্রিকেটার ও ম্যাচ রেফারি সেলিম শাহেদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমান। তারা ম্যাচের টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করবেন।জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস শাইন পুকুরের দুই ব্যাটারের আউটের ধরন শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি শব্দই শুধু লিখেছেন, ‘ছিঃ’। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন আরও সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার। কাল মিরপুরে এক ক্রিকেটার বললেন, ‘ফিক্সিং করতেও কিছুটা টেকনিক জ্ঞান লাগে এদের সেটাও নেই। খুবই দুঃখজনক।’বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি রাখা বোর্ড তদন্ত শুরু করেছে। বিসিবি ক্রিকেটের মর্যাদা সমুন্নত এবং ক্রিকেটে সর্বোচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখতে তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে চায়। যে কোনো দুর্নীতি বা অসদাচরণ, যা খেলার স্পৃহা নষ্ট করতে পারে তার প্রতি বোর্ডের শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে। বিসিবি তার এখতিয়ারে থাকা সব ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে ন্যায্যতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’