বাবুই ছানাগুলোর কান্না শুনল না কেউ!


বাবুই ছানাগুলোর কান্না শুনল না কেউ!
গাছটি ছিল বাবুই পাখিদের শত শত ছানার আশ্রয়স্থল। বিকেলের রোদে তালপাতার ফাঁকে উঁকি দিত তাদের ছোট্ট মাথাগুলো, কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হতো চারিপাশ।শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে সেই তালগাছটি কেটে ফেলার পর মুহূর্তেই থেমে যায় সব। ছিন্নভিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে বাসা, ডিম, আর নিথর ছানাগুলোর নিথর দেহ। কেউ শুনতে পায়নি তাদের কান্না! কেউ এগিয়ে আসেনি বাঁচাতে!ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন গ্রামে মোবারক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির তালগাছটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাবুই পাখিরা বাসা ছিল। স্থানীয়রা জানান, গাছটিতে শতাধিক বাসা, ডিম ও ছানা ছিল। সেই গাছটি মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি কিনে কেটে ফেলেন।গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়ে বাবুইদের সেই ‘গৃহনির্মিত শহর’। নিচে পড়ে ডিম ফেটে যায়, ছানাগুলো মরে যায় বা মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা ছুটে এসে মাটিতে পড়ে থাকা বাসা আর ছানাগুলোর বেদনাবিধুর দৃশ্য দেখেন। অনেকেই কান্না চাপিয়ে রাখতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, এই গাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, ছিল শত প্রাণের আবাস। যারা এটা কেটেছে, তারা নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রজননের সময় গাছ কেটে শত শত ছানা মেরে ফেলা কতটা অমানবিক হলে সম্ভব!এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। তবে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। বন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাবুই পাখি বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব ও সংরক্ষিত পাখি। এই পাখিরা নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে, যা শুধু নিরাপদ আশ্রয় নয়, প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্যও। ডালে ঝোলানো তাদের বাসা গ্রীষ্ম-বর্ষার প্রকৃতিকে আলাদা মাত্রা দেয়। তাই এদের এভাবে হত্যা করা শুধু অবৈধ নয়, এক ধরনের সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ধ্বংস।পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই ঘটনার দায় শুধু গাছ কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের নয়, এটি পুরো সমাজ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে।