বিএনপি ভোটে নাও আসতে পারে, এবার তাদের কৌশল ভিন্ন


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নাও নিতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপির আচরণ রহস্যজনক। ওদের কৌশল কী, সেটাও বোঝা মুশকিল। মনে হয়, ওরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসবে না। এবার তাদের কৌশলটা ভিন্ন। শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এমন ধারণা ব্যক্ত করেন। বৈঠকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে– এমন মন্তব্যের পর এই মনোভাবের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই প্রভাবশালী সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়েও বৈঠকে আলাপ হয়েছে। আলোচনায় বলা হয়, ওই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। অথচ ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রতি আসনে তিনজন করে প্রার্থী দিয়েছিল। বিএনপির শাসনামলে কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হয়নি মন্তব্য করে বৈঠকে আরও বলা হয়, বিরোধী দলকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয় না বলে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে– তা একেবারেই ঠিক নয়। বর্তমান সরকারের সময়ে বিরোধী দলগুলো সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে, যা বিএনপির শাসনামলে ছিল না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে বলা হয়েছে, এটাও সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কল্যাণে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, সেটা আর কোনো সরকারের আমলে হয়নি। সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, সুযোগ পেলেই মানবাধিকারের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলে আমেরিকা। অথচ আমেরিকাতেই মানবাধিকার নেই। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা চলছে: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে যা করার প্রয়োজন, এর সবটাই করছে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, আমেরিকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে। সেই দেশের দুটি ব্যাংক আস্থা সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডে সংকটে থাকা একটি ব্যাংক আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এ নিয়ে গোটা বিশ্বে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অর্থনীতিতে পড়েছে এর প্রচণ্ড প্রভাব। ফলশ্রুতিতে হাওয়া লেগেছে দ্রব্যমূল্যে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও কাজী জাফরউল্লাহ, উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও রশিদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এ ছাড়া দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বৈঠকে অংশ নেন।