বিডিআর হত্যার তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রমে সহায়ক তথ্য দিয়ে কমিশনকে সাহায্য করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।প্রায় ১৬ বছর আগে সংঘটিত ঘটনার তথ্য উদঘাটন জটিল হলেও কমিশন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।কমিশন নজিরবিহীন লোমহর্ষক পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সাক্ষ্য আহ্বান করেছে। যে পদ্ধতিতে তথ্য দেওয়া যাবে : ওয়েবসাইটের মাধ্যমে bdr-commission.org, ই-মেইলের মাধ্যমে: comission@bdr-commission.org। এছাড়াও কমিশনে হাজির হয়ে কিংবা কুরিয়ার ও ডাকযোগেও সহায়তা করা যাবে। ঠিকানা : বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম), নতুন ভবন (৭ম তলা), ড. কুদরত-এ-খুদা সড়ক (সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোড), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫। কমিশনকে ঢাকার বাইরে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকারী তথ্যদাতার বাসায় গিয়ে বা অন্য যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে উল্লিখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।হটলাইন (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা: ০১৭৬৯-৬০০২৮১)। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সহায়তাকারী ব্যক্তির পরিচয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।তথ্যদাতা তার নাম, ফোন, ই-মেইল, ঠিকানা সাবমিট করবেন ওয়েবসাইটে। এর আগে তথ্যের প্রকৃতি নির্বাচন করতে হবে– বেঁচে ফিরে আসা শহিদ পরিবারের ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, অন্যান্য সাক্ষী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, প্রিন্ট মিডিয়া (খবরের কাগজ), ইলেকট্রনিক মিডিয়া (ইমেজ, ভিডিও, অডিও, নিউজ পেপার) মোবাইল কল রেকর্ড, মোবাইল ম্যাসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর।স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদঘাটন, ঘটনায় রুজুকৃত দুটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত, ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার সহযোগী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ঘটনার সংঘটনকারী এবং ঘটনার অপরাপর সংশ্লিষ্ট বিষয় ও অপরাধীদের এবং সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, বিভাগ, সংগঠন চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে ওই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, কিছু কিছু বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এই প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখা হয়েছে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কমিশন সব তথ্য সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা করেছে।কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং কোনো প্রকার চাপ বা প্রভাব মুক্ত অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ এর অধীনে মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে (অবসরপ্রাপ্ত) সভাপতি করে ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের’ বিষয়ে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার উদঘাটন এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এ জাতীয় স্বাধীন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি।পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ বেসামরিক নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ নির্মম, নৃশংস ও ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রচিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। বিদ্রোহের ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি রাখা হয়েছে।পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই দেশে সবচেয়ে বড় মামলা।বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান। এরপর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন।হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। যা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
