বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় পরিবার
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে তার পরিবার। তাকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে- এমনটাই আশা তাদের। অনুমতি মিললেই দ্রুত যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতিও রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অথবা জার্মানি নিতে আগ্রহী তার পরিবার।
Advertisement
মেডিকেল বোর্ড অনেক দিন ধরে খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পরিবারের একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তারা খোঁজ নিয়েছেন যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হাসপাতালে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। তাই ওই দেশগুলোয় খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালের সন্ধান করছেন, যাতে তারা অনুমতি পাওয়ামাত্র অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বাইরে নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার এখন যে অবস্থা, তাতে তাকে বাইরে নেওয়া খুব জরুরি। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি পাবেন বলে তারা আশা করেন।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে নেতিবাচক নানা কথা বললেও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, সরকার চাইলে আদালতে না গিয়ে তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে।
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সম্প্রতি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতের আলাদা অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ তার মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। কাজেই বাকি সব পদক্ষেপও এ আদেশের আওতায়ই হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার চাইলে শর্তসাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়া যেকোনো বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে। খালেদা জিয়াকে প্রথম মুক্তি দেওয়া হয়েছে দুটি শর্ত দিয়ে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিনি বাড়িতে থাকবেন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাকে দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। আইনমন্ত্রী বলছেন যে, শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না- সেটা আসলে এরই মধ্যে পাঁচবার বদলানো হয়েছে। প্রথমে তো ছয় মাসের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তারপর সেটা যখন আবার ছয় মাসের জন্য বাড়াচ্ছে সেটার জন্য তো নতুন করে নির্বাহী আদেশ হচ্ছে, তার মানে সিম্পলি সরকার চাইলে ঢাকায় চিকিৎসা করার জায়গায় ঢাকা শব্দটা বাদ দিলেই হলো।
এটি আদালতের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত এরই মধ্যে তার রায় দিয়েছেন। আদালতের কাছে কয়েকবার তার জামিনও চাওয়া হয়েছে এবং সেটি নাকচ করা হয়েছে। তার মানে আদালতের ‘চ্যাপ্টার’ সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। আদালতে হয়তো যাওয়া যায়, কিন্তু এটা তো আদালতের ব্যাপার না, কারণ আদালত তো তাকে মুক্তি দেয়নি। তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো- তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিডনির কর্মক্ষমতা কিছু কমতে থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যে কারণে কয়েকবার তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার আরেক ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কামুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড তার রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। ৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরাগে ভুগছেন।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।