বিপাকে পাটচাষি


আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অংশ বাংলার সোনালি আঁশ পাট। এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। বাংলাদেশের পাটের আঁশের মান অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো হওয়ায় এর খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে এ শিল্পের সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। বুধবার খবরে প্রকাশ, বেসরকারি পাটকল মালিকরা এ বছর পাটের ন্যায্যমূল্য দিতে চাচ্ছেন না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে আগের মতো আর পাট কেনাও হয় না। মূল্যায়ন না হওয়ায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত পাট নিয়ে তাই বিপাকে পড়েছেন কৃষক। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিগত ১০ বছরের মধ্যে এবার পাটের দাম নিম্নমুখী। বর্তমানে প্রতি মন পাট ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক বছর আগেও ছিল ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। বাড়তি দামের আশায় যারা গত বছর পাট সংরক্ষণ করেছেন, তারা আরও বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে, অথচ দেশে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন হলেও পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারে আমাদের তেমন আগ্রহ নেই। সেই স্থান দখল করেছে পলিথিন। নিজেদের উৎপাদন যদি দেশেই ব্যবহার করা না হয়, বিপুল পরিমাণ পাট নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। পাটচাষে অনাগ্রহী হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। এক্ষেত্রে পলিথিনের দৌরাত্ম্য কমানোর পাশাপাশি দেশে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়াতে হবে। আবার বিশ্ববাজারের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে সরকারি পাটকলগুলো খুলে দিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশ্বমানের পাটজাত পণ্য উৎপাদনে বেসরকারি পাটকলগুলোর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি সরকারকে এ খাতের কৃষক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আশার কথা, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষকের জমিতে পানির ঢেউয়ের মতো পাটগাছ দোলার সেই দৃশ্য এখনো হারিয়ে যায়নি। কাঁচা পাট পানিতে ভিজিয়ে রেখে আঁশ ছাড়ানোর জন্য তাদের যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, সেটিও আছে। শুধু একে রক্ষায় কৃষকের কষ্টের বিনিময়ে উৎপাদিত সোনালি আঁশের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার এগিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশা।