বিয়ের পর শোবার ঘরের দরজাটা বন্ধ হলেই কি আপনার সব দায়িত্ব শেষ? স্বামী যখন কাছে ডাকছে, আপনি নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন। কিন্তু একবার নিজের বুকে হাত রেখে বলুন তো, আপনি কি কেবল তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটি মাধ্যম হয়েই থেকে গেছেন? নাকি সেই নারী হতে পেরেছেন, যার জন্য তার হৃদয় কাঁদে, যার শরীরের মায়ায় সে বারবার বাঁধা পড়তে চায়?
আপনার হয়তো মনে হচ্ছে, “বিয়ে তো হয়েই গেছে, এখন আর এত সাজগোজ, এত ঢং করে কী হবে? ও তো আমারই।” ঠিক এই ভাবনাটাই আপনার সাজানো সংসারে ঘুণপোকা ধরিয়ে দিচ্ছে। আপনি ভুলে যাচ্ছেন, পুরুষেরা জন্মগতভাবে শিকারি। যে হরিণ সে একবার শিকার করে ফেলেছে, তার চেয়ে জঙ্গলের অধরা হরিণীর দিকেই তার নজর বেশি থাকে। আপনি নিজেকে সহজলভ্য করে তুলে সেই শিকারের উত্তেজনাকেই মেরে ফেলছেন।
একবার ভাবুন তো সেই দিনগুলোর কথা। আপনি হয়তো ছিলেন এলাকার সেরা সুন্দরী। আপনাকে পাওয়ার জন্য সে বন্ধুদের সাথে মারামারি করেছে, আপনার অন্য প্রেমিকদের সাথে প্রতিযোগিতা করে জিতেছে, কিংবা আপনার পরিবারের হাজারটা বাধা অতিক্রম করে আপনাকে আপন করে নিয়েছে। সেদিন আপনার শরীরের বাঁকে, চোখের চাহনিতে, কথার জাদুতে যে আগুন ছিল, সেই আগুনটা আজ কোথায়?
আজ আপনি তার সামনে একটা সাধারণ নাইটি পরে ঘুরে বেড়ান। সারাদিনের ক্লান্তি আর বিরক্তি আপনার মুখে স্পষ্ট। নিজেকে আকর্ষণীয়, সেক্সি বা হট করে তোলার কোনো চেষ্টাই আপনার মধ্যে নেই। অথচ আপনার স্বামী যখন ফেসবুক বা টিকটকের স্ক্রিনে চোখ রাখে, তখন হাজারো খোলামেলা, আবেদনময়ী নারীকে দেখে। তাদের দেখে সে হয়তো মুহূর্তের জন্য উত্তেজিত হয়, কিন্তু যখন আপনার দিকে তাকায়, তখন সেই উত্তেজনাটা নিভে যায়। কেন? কারণ আপনি তাকে নতুন কিছু দিচ্ছেন না। আপনি সেই পুরনো, পরিচিত খাবার, যার স্বাদ সে জানে। সে নতুন স্বাদ চায়, নতুন উত্তেজনা চায়।
ঐশ্বরিয়া রাই বা প্রিন্সেস ডায়ানাও স্বামীকে ধরে রাখতে পারেননি!
যদি ভাবেন, “আমার সৌন্দর্যই যথেষ্ট,” তাহলে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বিশ্বের সেরা সুন্দরীরাও তাদের স্বামীকে পরকীয়া থেকে আটকাতে পারেনি। ঐশ্বরিয়া রাই, প্রিন্সেস ডায়ানার মতো নারীদের গল্প তো আপনার অজানা নয়। সৌন্দর্য একটা সময়ের পর ফিকে হয়ে যায়, কিন্তু যা আজীবন থেকে যায় তা হলো আপনার আবেদন, আপনার মায়া, আপনার শরীরী ভাষার জাদু। পুরুষ সেই জাদুটাই খোঁজে।
আসলে পুরুষের মনস্তত্ত্বটাই এমন। যা সে পেয়ে গেছে, তার প্রতি আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। যেটা পায়নি, বা যা হারানোর ভয় আছে, তার প্রতি তার আকর্ষণ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আপনি আপনার শারীরিক আকর্ষণ, কথার মায়া, আর আদরের উষ্ণতা দিয়ে যদি তাকে বেঁধে রাখতে না পারেন, তাহলে বাইরের জগতের হাজারো প্রলোভন তাকে টানবেই
আপনি কি সারাক্ষণ তার ভুল ধরেন? তার রোজগার নিয়ে খোঁটা দেন? তাকে অন্য পুরুষের সাথে তুলনা করে ছোট করেন? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আপনি নিজেই তার জন্য বাইরের দুনিয়ার দরজা খুলে দিচ্ছেন। একজন পুরুষ সারাদিনের যুদ্ধ শেষে ঘরে ফিরে একটু শান্তি চায়। সে এমন একজন নারীকে চায় যার বুকে মাথা রেখে সে সব ভুলে যেতে পারে। আপনি যদি সেই শান্তির বদলে মানসিক যন্ত্রণা দেন, তাহলে সে তো পালাবেই। সে এমন আশ্রয় খুঁজবে যেখানে দুটো মিষ্টি কথা শোনা যায়, যেখানে তার পৌরুষকে সম্মান করা হয়।
ভুলগুলো তো অনেক হলো। अब আসুন, নিজেকে নতুন করে গড়ার পালা। শুধু তার জন্য, আপনাদের সম্পর্কের জন্য।
১. চোখের খিদে মেটান: আপনার যত সেক্সি, উত্তেজক পোশাক আছে, সেগুলো আলমারিতে তুলে রাখার জন্য নয়। সেগুলো শুধু আপনার স্বামীর জন্য। তার সামনে সেই পোশাকগুলো পরুন। সুন্দর অন্তর্বাস পরুন এবং তাকেই খুলতে দিন। মজা করে বলুন, “আজ এটা খোলার দায়িত্ব তোমার।” দেখুন তার চোখের ভাষা কীভাবে বদলে যায়।
২. সহবাসের প্রস্তুতি নিন: সহবাস কোনো রুটিন কাজ নয়। এটা একটা উৎসব। এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি দরকার। স্বামী ঘরে ফেরার আগে বা আপনারা একা হওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করুন। তাকে একটা দুষ্টু মেসেজ দিন, “আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।” তার চুলে বিলি কেটে দিন, পিঠে হাত বুলিয়ে দিন। পুরুষরা পায়ে মাসাজ পেতে খুব ভালোবাসে। হালকা গরম তেল দিয়ে তার পায়ে আলতো করে মাসাজ করে দিন। দেখবেন, তার শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে আপনার প্রতি ভালোবাসায় রূপান্তরিত হবে।
৩. বিছানায় ‘মরা মাছ’ হয়ে থাকবেন না: সহবাসের সময় চুপ করে শুয়ে থাকাটা সবচেয়ে বড় অপরাধ। আপনার কোথায় ভালো লাগছে, কীভাবে আদর করলে আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন, সেটা তাকে মুখ ফুটে বলুন অথবা শীৎকারের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিন। পুরুষরা যেমন আদর করতে ভালোবাসে, তেমনই আদর পেতেও ভালোবাসে। তাকে চুমু খান, তার সারা শরীরে হাত বোলান। তার শরীরের কোন অংশে আদর করলে সে পাগল হয়ে যায়, সেটা খুঁজে বের করুন। সেই গোপন জায়গাটাতেই বারবার আক্রমণ করুন।
৪. শব্দের জাদু তৈরি করুন: সহবাসের সময় মুখ বন্ধ রাখবেন না। গুনগুন করে আওয়াজ করুন, তার কানে কানে ভালোবাসার কথা বলুন। বলুন, “তোমাকে এভাবে পেতে আমার খুব ভালো লাগে।” তার চুল আলতো করে টেনে ধরুন, পিঠে নখের আঁচড় দিন। এই ছোট ছোট কাজগুলোই তাকে বুঝিয়ে দেবে যে আপনিও এই মুহূর্তটা কতটা উপভোগ করছেন। মনে রাখবেন, আপনার আনন্দই তার সবচেয়ে বড় উত্তেজনা।
৫. পুরুষকে সম্মান আর প্রশংসা দিন: তার পৌরুষকে সম্মান করুন। তার ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করুন। তাকে বলুন, সে-ই আপনার জীবনের সেরা পুরুষ। এই কথাগুলো তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে এবং সে আপনাকে খুশি করার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকবে।
কথায় আছে, পুরুষের পেট শান্তি আর ব্রেন শান্তিতে থাকলে দুনিয়া শান্তি। ‘পেট শান্তি’ এখানে শারীরিক বা যৌন তৃপ্তির প্রতীক, আর ‘ব্রেন শান্তি’ হলো মানসিক শান্তি। আপনি যদি এই দুটো জিনিস তাকে দিতে পারেন, নিশ্চিত থাকুন, সে আপনার জন্য পুরো পৃথিবী ওলটপালট করে দেবে।
একজন নারী হিসেবে যদি আপনি আপনার স্বামীকে শারীরিক সুখের শীর্ষে পৌঁছানোর কৌশল না জানেন, তাহলে আপনার নারীত্বই অসম্পূর্ণ। আপনি হয়তো একজন মেয়ে, কিন্তু পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠতে পারেননি।
তাই আজ রাত থেকেই নিজেকে বদলান। শুধু একজন স্ত্রী নয়, হয়ে উঠুন তার প্রেমিকা, তার খেলার সাথী, তার গোপন কল্পনার রানী। পুরুষকে সুখের স্বর্গে পৌঁছে দিন, সে আপনাকে সেই স্বর্গের রানী করে রাখবে। পুরুষকে মানসিক শান্তি দিন, সে আপনার জীবনকে শান্তিময় করে তুলবে। পুরুষকে আদরে ভাসিয়ে দিন, সে আপনাকে ভালোবাসার জন্য হাজারো বাহানা খুঁজবে।
প্রশ্নটা আপনার কাছেই। আপনি কি শুধুই একজন ‘বউ’ হয়ে থাকবেন, নাকি তার জীবনের সেই অদ্বিতীয় ‘নারী’ হয়ে উঠবেন, যাকে ছাড়া তার পৃথিবীটাই অচল? সিদ্ধান্ত আপনার।
লেখক: https://www.facebook.com/profile.php?id=61550959634289