জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু তারা সফল হবে না। কারণ এটা বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তানে পুতুল সরকার বানাতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কোনো ষড়যন্ত্র বাংলার মানুষ বরদাশত করবে না। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। যতই ষড়যন্ত্র করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্মুখী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনি বৈতরণী পার হবে।
বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য’র প্রতিবাদে শনিবার বিকালে আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’-এ আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। এ সময় যারা এখনো নির্বাচনের বিরোধিতা করে হুমকি দিচ্ছে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় কিনা জাতি তা দেখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে ও বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিরোধে যে প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়েছে আমি তার সঙ্গে একমত। তিনি আরও বলেন, আজকে একটাই কথা দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আমরা শান্তি এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। আগামী দিনে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় এনে এই স্লোগানকে আমরা বাস্তবায়ন করব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয়নি, যারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, পাক বাহিনীকে যারা অস্ত্র দিয়েছিল, তাদের মোকাবিলা করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা পরাজিত হইনি। আজকেও বলতে চাই, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ, কিছু নেতা যারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, নানা রকম কৌশল করছেন, তাদের প্রতি আমরা বলতে চাই- একাত্তরে আমরা পরাজিত হইনি, ওই নৌবহরের হুমকিতে আমরা পালিয়ে যাইনি। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে, অতীতেও আমরা ব্যর্থ হইনি, আগামীতেও হব না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপির আন্দোলনের হুমকির উত্তরে তিনি বলেন, কিসের ভয় দেখান। গত ১৫ বছর দেখেছি আপনাদের। আন্দোলন করবেন, শেখ হাসিনাকে হটাবেন। এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেননি। আর আছে মাত্র তিন মাস। এই সময়ে আমরা রাজপথে পাহারা দেব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতক ও তাদের বিদেশি মদদদাতারা একাট্টা হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। স্যাংশনের কথা বলে, ভিসানীতির কথা বলে তারা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়। এটা আফগানিস্তান নয়, পাকিস্তান নয়। এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। কোনো ষড়যন্ত্র বাংলার মানুষ বরদাশত করবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আবার জামায়াত-বিএনপি সোচ্চার হয়েছে। তারা জানে না, আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। বিএনপি-জামায়াত আপনারা যতই উৎফুল হন, আপনারাও এই ফাঁদে পড়বেন। তাই বলি, নির্বাচনে আসুন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এ কারণে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় থাকেনি, ক্ষমতায় যায়নি। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। জনমানুষের সমর্থন নিয়েই গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্মুখী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই নির্বাচনি বৈতরণী পার হব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। আজ যে দলটি চোখ রাঙিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে চায়, তারা কেন বোঝে না; যে দলকে হুমকি দেয়, সেই দলের নাম আওয়ামী লীগ, সেই দলের নেতা শেখ হাসিনা আর এই দলের জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে যারা মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে অতি উৎসাহী হয়েছে, তারা জানে না খুব শিগগিরই মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা নতুন করে আবার হতাশায় নিমজ্জিত হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এই রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ কোনো দেশের ভিসানীতি সম্মানজনক নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। যারা বলেছেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু দেখতে চাই, তাদের চাওয়া আর আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা উদ্বিগ্ন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বলা হয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচন যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করে তাহলে তার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ হবে। যারা এখনো নির্বাচনের বিরোধিতা করে হুমকি দিচ্ছেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছেন ওই দেশ তাদের ওপর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় কিনা জাতি দেখতে চায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের প্রতিহত করা হবে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।
এতে আরও বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, ডা. দিলীপ কুমার রায়, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান মিলন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।